পটকা মাছ বিষাক্ত কেন? পটকা মাছ খেলে মানুষ মারা যায় কেন?

পটকা মাছ বিষাক্ত কেন?

পটকা মাছ খেলে মানুষ মারা যায় কেন?

Brong Asked on December 27, 2019 in খাদ্য.
Add Comment
1 Answer(s)

পটকা মাছ ইংরেজিতে ব্লো বা বেলুন মাছ হিসেবে পরিচিত এবং স্থানীয়ভাবে পটকা বা টেপা মাছ। দেখতে গোবেচারা টাইপের হলেও মাছটি অত্যন্ত বিষাক্ত।

এ মাছ সম্পর্কে জেলেদের কোনো ধারণা না থাকায় তারা নিজেরা এ মাছ খায় অথবা বাজারে বিক্রি করে। বিষাক্ত এ মাছ খেয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে অথবা মারা যায়। আর তখন পত্রিকায় খবর বের হয় ‘পটকা মাছ খেয়ে অমুক জায়গায় এতজন অসুস্থ কিংবা মৃত।’

আসলে আমাদের দেশের মানুষ জানেই না, পটকা মাছের শরীর আস্ত এটা বিষের থলি। টেট্রোডোটক্সিন নামে এক বিবশকারী বিষ আছে পটকায়। এই বিষ কারও শরীরে ঢুকলে মৃত্যু অবধারিত।

বাংলাদেশে পটকা মাছের ১৩টি প্রজাতি আছে যাদের দুটি মিঠা পানিতে এবং বাকীগুলো সমুদ্রে বাস করে। পটকা মাছের বিষ টেট্রোডোটক্সিন(টিটিএক্স) একটি শক্তিশালী বিষাক্ত পদার্থ যা মানুষের উত্তেজক (এক্সাইট্যাবল) সেল মেমব্রেনের সোডিয়াম চ্যানেল বন্ধ করে দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম।

মাছের বিষাক্ত পদার্থটি তার যকৃত, ডিম্বাশয়, অন্ত্র এবং চামড়ার মধ্যে খুব বেশি ঘনীভূত থাকে, তবে শরীরের পেশীসমূহ সাধারণত বিষমুক্ত থাকে। সব পটকা মাছই বিষাক্ত নয়। কিছু আছে যেগুলো হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বিষাক্ত, যদিও প্রত্যেক প্রজাতির পটকা মাছের বিষের ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদন বাংলাদেশে নেই।

মাছের বিষের পরিমাণ নির্ভর করে এর লিঙ্গ, ভৌগোলিক অবস্থান এবং মওসুমের ওপর। প্রজননের অব্যবহিত পূর্বে এবং প্রজননকালীন সময়ে এতে অপেক্ষাকৃত বেশি বিষ থাকে এবং পুরুষ থেকে স্ত্রীজাতীয় মাছ বেশি বিষাক্ত। পটকা মাছ যে কারণে বিষাক্ত কারণ অ-কোষ থেকে ডিম্বাশয় বেশি বিষাক্ত। এ বিষের ফলে মানুষের জিহ্বা এবং ঠোঁটের স্বাদ নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না, মাথা ঘোরে ও বমি হয় এবং পরবর্তীতে শরীর অসাড় হয়ে আসে। সারা শরীর ঝিনঝিন করে, হ্নদস্পন্দন বেড়ে যায়, রক্তচাপ কমে যায় এবং মাংসপেশী অসাড় হয়ে পড়।

ডায়াফ্রাম অসাড় হয়ে যাওয়ার ফলে শ্বাসতন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়। তবে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার বেশি যে জীবিত থাকে সে সাধারণত বেঁচে যায়। বিপদে পড়লে কিংবা উত্তেজিত হলে পানি খেয়ে অথবা পেটে বাতাস ঢুকিয়ে এরা ফুটবলের আকৃতি ধারণ করতে পারে।

টিয়া পাখির ঠোঁটের মতো বাঁকানো অত্যন্ত শক্তিশালী দু’পাটি দাঁত আছে এদের। এই দাঁতের সাহায্যে এরা শিকারকে কাবু করে ফেলে। এদের শিকার সাধারণত শামুক, ঝিনুক, গলদা চিংড়ি ইত্যাদি।

পটকা মাছ খুব একটা সাঁতার কাটতে পারে না। পানিতে এরা অলস ভঙ্গিতে চলাফেরা করে। কিন্তু পটকার বিষের হিসাব কষতে গেলে খটকা লেগে যায়। একটা মাঝারি আকারের জাপানি পটকায় যে টেট্রোডোটক্সিন থাকে, তা ৩০ জনেরও বেশি লোকের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

চিকিৎসকগণ যদি এমন কোনো রোগী দেখেন যাদের শরীরের সর্বত্রই একটি ঝিনঝিন ভাব মনে হয় হয়, মাথা ঘোরে এবং শরীরের কোনো অংশ বা হাত-পা অবশ হয়ে যায়, তাহলে তারা পটকা মাছ খেয়েছে কি না তা অনুসন্ধান করে দেখা উচিত।

চিকিৎসকগণ কোনো রোগীকে পটকা মাছের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত বলে সন্দেহ করলে তাড়াতাড়ি তা স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত। গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে পটকা মাছের বিষক্রিয়া এবং বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক পটকা মাছ সম্পর্কে অজ্ঞতাই প্রাদুর্ভাবসমূহের জন্য দায়ী।

পটকা মাছের বিষক্রিয়ায় মানুষ মারা যায় এ খবরটি জাতীয়ভাবে প্রচার করতে পারলে ভবিষ্যৎ প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় তা সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

 

সূত্র: আইসিডিডিআর,বি।

Brong Answered on December 27, 2019.
Add Comment

Your Answer

By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.