নামাজ পড়ার সময় কোন সূরাটি পড়তে হয়?

নামাজ পড়ার সময় কোন কোন দোয়া ও সূরাটি পড়তে হয়?

বিস্তারিত জানতে চাই

 

Add Comment
2 Answer(s)

নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম। সহীহ হাদিস ও কুরআনের আলোকে নামাজ।

নামাজ হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ইবাদত সকল ইবাদতের মাঝে। যার নামাজের হিসাব সহজ হবে তার সকল হিসেবে সহজ হয়ে যাবে। আর যার নামাজের হিসেব কঠিন হবে তার সকল হিসেব কঠিন হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ্ বলেন যে আল্লাহ বলেন,
وَأَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِىْ
‘আর তুমি সলাত (নামাজ) কায়েম কর আমাকে স্মরণ করার জন্য’ (ত্বোয়া-হা আয়াত নং ১৪)।

নামাজ পড়ার নিয়মঃ-(শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত)
রসূল (সঃ) বলেন যে “তোমরা সলাত আদায় কর সেভাবে, যেভাবে আমাকে সলাত আদায় করতে দেখছ….)
শাহিহ বুখারী হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬; মিশকাত হা/৬৮৩, ‘সলাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৬।

নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম। সহীহ হাদিস ও কুরআনের আলোকে

নামাজের তাকবীর
নামাযে দাঁড়িয়ে নবী (সাঃ) ‘আল্লা-হু আকবার’ বলে নামায শুরু করতেন। (এর পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ্‌’ বা অন্য কিছু বলতেন না।) রসূল (সঃ) বলেন “ততক্ষণ পর্যন্ত কোন মানুষেরই নামায পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ঠিক যথার্থরুপে ওযু করেছে। অতঃপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলেছে।” (ত্বাবারানী, মু’জাম, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ৮৬পৃ:)

নামাজে হাত বাধার নিয়ম সালাতে হাত বাধার নিয়ম
এরপর নবী (সাঃ) তাঁর ডানহাতকে বামহাতের উপর রাখতেন। (মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩৫২নং)

কখনো বা ডান হাত দ্বারা বাম হাতকে ধারণ করতেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৭২৬নং, নাসাঈ, সুনান, তিরমিযী, সুনান ২৫২, দারাক্বুত্বনী, সুনান)

নামাজে হাত কোথায় বাঁধতে হবে
এরপর মহানবী (সাঃ) উভয় হাতকে বুকের উপর রাখতেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৭৫৯ নং, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ ৪৭৯ নং, আহমাদ, মুসনাদ, আবুশ শায়খ প্রমুখ)

সাজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা ও একাগ্ৰতা।
নাবী (সাঃ) সলাত অবস্থায় মাথা নীচু করে যমীনের দিকে দৃষ্টি রাখতেন। তিনি যখন কা’বা ঘরে প্রবেশ করেন তখন থেকে বেরিয়ে আসা পর্যন্ত তাঁর দৃষ্টি সাজদার স্থানচ্যুত হয়নি। অর্থাৎ নামাজ অবস্থায় সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখতে হবে।

নামাজ অবস্থায় এদিক ওদিক তাকানো নিষেধ।
যারা সলাতাবস্থায় আকাশের দিকে তাকায় তারা যেন এথেকে বিরত হয়। অন্যথায় তাদের চক্ষু ফিরে পাবে না। অপর বর্ণনানুযায়ী তাদের চক্ষু কেড়ে নেয়া হবে।
তোমরা যখন ছলাত পড়বে তখন এদিক সেদিক তাকাবে না, কেননা বান্দাহ যতক্ষণ পর্যন্ত এদিক সেদিক না তাকায় ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তার চেহারাকে বান্দার চেহারার প্রতি নিবদ্ধ রাখেন।

তিরমিযী, হাকিম, তারা উভয়ই একে সহীহ বলেছেন। “সহীহ আত-তারগীব” (৩৫৩)।

নামাজে সানা পড়া
এর পর সানা পড়তে হবে। হাদিস থেকে আমরা চারটি সানা দেখতে পাই। যে কোন একটি পড়তে হবে।
(আবূদাঊদ, সুনান ৮৫৭ নং,হাকেম, মুস্তাদরাক)

আবূ সাঈদ ও আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) নামাযের শুরুতে এই দুআ পাঠ করতেন,
سُبْحَانَكَ اللّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالى جَدُّكَ وَلاَ إِلهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ:- সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা অতাবা-রাকাসমুকা অতাআ’-লা জাদ্দুকা অ লা ইলা-হা গায়রুক।
অর্থ:- তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি হে আল্লাহ! তোমার নাম অতি বর্কতময়, তোমার মাহাত্ম অতি উচ্চ এবং তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই।
(আবূদাঊদ, সুনান ৭৭৬, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৮০৬, ত্বাহাবী ১/১১৭, দারাক্বুত্বনী, সুনান ১১৩, বায়হাকী ২/৩৪,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২৩৫, নাসাঈ, সুনান, দারেমী, সুনান, ইআশা:)

ক্বীরাআত শুরু করার পূর্বে ইস্তিআযাহ্‌।
‘আয়ে ইস্‌তেফতা-হ বা ‘সানা’ পড়ে “আউজু বিল্লাহি মিনাশ শায়তনির রজিম-বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম”
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
বলে ফাতিহা পাঠ করবে এবং অন্যান্য রাক‘আতে কেবল “বিসমিল্লাহির রহ্‌মানির রহীম” বলবে।

সূরা ফাতিহা পাঠ করা।
এই সূরা তিনি থেমে থেমে পড়তেন; ‘বিসমিল্লাহির রহ্‌মানির রহীম’ পড়ে থামতেন। অতঃপর ‘আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ’-লামীন’ বলে থামতেন। আর অনুরুপ প্রত্যেক আয়াত শেষে থেমে থেমে পড়তেন।
(আবূদাঊদ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩৪৩নং)

সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা পাঠ করা।
নবী (সাঃ) অন্য একটি সূরা পাঠ করতেন। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ‘আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে যে, আমরা যেন সূরা ফাতিহা এবং সাধ্যমত অন্য সূরা পাঠ করি।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৮১৮নং)। যে কোন সূরা পাঠ করতে পারবে। কোন সমস্যা নেই।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাঃ) আমাকে এই ঘোষণা করতে আদেশ করলেন যে, “সূরা ফাতিহা এবং অতিরিক্ত অন্য সূরা পাঠ ছাড়া নামায হবে না।” (ঐ ৮২০নং)

প্রত্যেক সূরা পাঠ করার পূর্বে ‘বিসমিল্লা-হির রহ্‌মা-নির রহীম’ বলা সুন্নত। (আবূদাঊদ, সুনান ৭৮৪, ৭৮৮নং)
এখানে অতি জরুরী একটি কথা। যেনে রাখা দরকার
যদি ফরজ নামাজ তিন বা চার রাকাত বিশিষ্ট হয়। তাহলে প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাতে অন্য সূরা পড়বে। আর বাকি এক বা দুই রাকাতে শুরু সূরা ফাতিহা পড়বে। আর সুন্নত নামাজে প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা পড়তে হবে।

নামাজে রুকু করার নিয়ম
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কারো নামায ততক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে উত্তমরুপে ওযু করে—- অতঃপর তকবীর দিয়ে রুকূ করে এবং উভয় হাঁটুর উপর হাত রেখে তার হাড়ের জোড়গুলো স্থির ও শ্রান্ত হয়ে যায়।” (আবূদাঊদ, সুনান ৮৫৭, নাসাঈ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক)

হাত দ্বারা হাঁটুকে শক্ত করে ধরতেন। (বুখারী, আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ৭৯২ নং) হাতের আঙ্গুলগুলোকে খুলে (ফাঁক ফাঁক করে) রাখতেন। (হাকেম, মুস্তাদরাক, সআবূদাঊদ, সুনান ৮০৯ নং)

এই সময় তিনি তাঁর পিঠকে বিছিয়ে লম্বা ও সোজা রাখতেন। কোমর থেকে পিঠকে মচকে যাওয়া ডালের মত ঝুঁকিয়ে দিতেন। (বুখারী ৮২৮, বায়হাকী, মিশকাত ৭৯২নং) তাঁর পিঠ এমন সোজা ও সমতল থাকত যে, যদি তার উপর পানি ঢালা হত তাহলে তা কোন দিকে গড়িয়ে পড়ে যেত না। (ত্বাবা,কাবীরসাগীর,আহমাদ, মুসনাদ১/১২৪,ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৮৭২)

রুকূতে তিনি তাঁর মাথাকেও সোজা রাখতেন। পিঠ থেকে মাথা না নিচু হত, না উঁচু। (আবূদাঊদ, সুনান, বুখারী জুযউল ক্বিরাআহ্‌, মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ৮০১ নং) আর নামাযে তাঁর দৃষ্টি নিবদ্ধ হত সিজদার স্থানে। (বায়হাকী,হাকেম, মুস্তাদরাক, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩৫৪নং)

রুকুতে স্থিরতার গুরুত্ব।
তিনি এক নামাযীকে দেখলেন, সে পূর্ণরুপে রুকূ করে না, আর সিজদাহ করে ঠকঠক করে। বললেন, “যদি এই ব্যক্তি এই অবস্থায় মারা যায়, তাহলে সে মুহাম্মাদের মিল্লাত ছাড়া অন্য মিল্লাতে থাকা অবস্থায় মারা যাবে। ঠকঠক করে নামায পড়ছে; যেমন কাক ঠকঠক করে রক্ত ঠুকরে খায়! যে ব্যক্তি পূর্ণরুপে রুকূ করে না এবং ঠকঠক করে সিজদাহ করে, সে তো সেই ক্ষুধার্ত মানুষের মত, যে একটি অথবা দু’টি খেজুর খায়, যাতে তার ক্ষুধা মিটে না।” (আবু য়্যা’লা, আজুরী, বায়হাকী, ত্বাবারানী, মু’জাম, যিয়া, ইবনে আসাকির, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৩১পৃ:)

আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, ‘আমার বন্ধু আমাকে নিষেধ করেছেন যে, আমি যেন মোরগের দানা খাওয়ার মত ঠকঠক করে নামায না পড়ি, শিয়ালের মত (নামাযে) চোরা দৃষ্টিতে (এদিক-ওদিক) না তাকাই, আর বানরের বসার মত (পায়ের রলা খাড়া করে) না বসি।’ (ত্বায়ালিসী, আহমাদ, মুসনাদ ২/২৬৫, ইবনে আবী শাইবা)

তিনি বলতেন, “সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর হল সেই ব্যক্তি, যে তার নামায চুরি করে।” লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! নামায কিভাবে চুরি করবে?’ বললেন, “পূর্ণরুপে রুকূ ও সিজদাহ না করে।”
(ইবনে আবী শাইবা ২৯৬০ নং, ত্বাবা,হাকেম, মুস্তাদরাক)।

রুকুর দোয়া
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْم
উচ্চারণ:- সুবহা-না রাব্বিয়াল আযীম।
অর্থ:- আমি আমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি।
এটি তিনি ৩ বার পাঠ করতেন। (আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, দারাক্বুত্বনী, সুনান, ত্বাহা, বাযযার, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ ৬০৪নং, ত্বাবারানী, মু’জাম)।

কওমাহ্‌। বা ওঠে দাঁড়ানো।
অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাঃ) রুকূ থেকে মাথা ও পিঠ তুলে সোজা খাড়া হতেন। এই সময় তিনি বলতেন,
سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه
“সামিআল্লাহু লিমানহামিদাহ্‌-রাব্বানা অলাকালহাম্‌দ”।
। الْحَمْد (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭৯৩, ৭৯৯নং) ।ربنا وَلَكَ الْحَمْد (বুখারী ৮০৩ নং, প্রমুখ)
।اَللّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْد (বুখারী ৭৯৬, মুসলিম, প্রভৃতি, মিশকাত ৮৭৪নং)
। اَللّهُمَّ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْد (বুখারী ৭৯৫নং, মুসলিম, প্রমুখ)।
(অর্থাৎ, আল্লাহর যে প্রশংসা করে তিনি তা শ্রবণ করেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭৯৯ নং) এখানের তিনটিই টিক।

রসূল (সঃ) বলেছেন “কোন লোকেরই নামায ততক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তকবীর দিয়েছে —- অতঃপর রুকূ করেছে — অতঃপর ‘সামিআল্লাহু লিমানহামিদাহ্‌’ বলে সোজা খাড়া হয়েছে।” (আবূদাঊদ, সুনান ৮৫৭ নং, হাকেম, মুস্তাদরাক। এখানে আর দুআ আছে।

সিজদা করার নিয়ম।
নারী ও পুরুষের সিজদার কোন পার্থক্য নেই। কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে।
কওমার পর নবী (সাঃ) তকবীর বলে সিজদায় যেতেন। নামায ভুলকারী সাহাবীকে সিজদাহ করতে আদেশ দিয়ে বলেছিলেন, “স্থিরতার সাথে সিজদাহ বিনা নামায সম্পূর্ণ হবে না।” (আবূদাঊদ, সুনান ৮৫৭ নং,হাকেম, মুস্তাদরাক)

সিজদায় যাওয়ার পূর্বে ‘রফ্‌য়ে ইয়াদাইন’ করার বর্ণনাও সহীহ হাদীসে পাওয়া যায়। (সহিহ,নাসাঈ, সুনান ১০৪০ নং, দারাক্বুত্বনী, সুনান)
সিজদায় যাওয়ার সময় আল্লাহর নবী (সাঃ) তাঁরহাত দু’টিকে নিজ পাঁজর থেকে দূরে রাখতেন। (আবূ য়্যা’লা, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ ৬২৫ নং)

এ সময় সর্বপ্রথম তিনি তাঁর হাত দু’টিকে মুসাল্লায় রাখতেন। তারপর রাখতেন হাঁটু। এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসগুলি অধিকতর সহীহ। (আবূদাঊদ, সুনান ৭৪৬, সহিহ,নাসাঈ, সুনান ১০৪৪, মিশকাত ৮৯৯, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩৫৭, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৪০পৃ:, উদ্দাহ্‌ ৯৬পৃ:)

প্রথমে হাঁটু রাখার হাদীসও বহু উলামার নিকট শুদ্ধ। তাই তাঁদের নিকট উভয় আমলই বৈধ। সুবিধামত হাত অথবা হাঁটু আগে রাখতে পারে নামাযী। (ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ্‌ ২২/৪৪৯, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/২৯১, উদ্দাহ্‌ ৯৬পৃ:, ইবনে বায; কাইফিয়্যাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), মারাসা ১২৭পৃ:, ইবনে উসাইমীন; রিসালাতুন ফী সিফাতি স্বালাতিন নাবী (সাঃ) ৯পৃ:, আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/১৬৫-১৫৭, ফাতহুল মা’বূদ বিসিহ্‌হাতি তাক্বদীমির রুকবাতাইনি ক্বাবলাল য়্যাদাইনি ফিস সুজুদ)

তিনি বলতেন, “হাত দু’টিও সিজদাহ করে, যেমন চেহারা করে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে কেউ যখন (সিজদার জন্য) নিজের চেহারা (মুসাল্লায়) রাখবে, তখন যেন সে তার হাত দু’টিকেও রাখে এবং যখন চেহারা তুলবে, তখন যেন হাত দু’টিকেও তোলে।” (ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, আহমাদ, মুসনাদ, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩১৩ নং)

সিজদাহ করার সময় তিনি উভয় হাতের চেটোর উপর ভর দিতেন এবং চোটো দু’টিকে বিছিয়ে রাখতেন। (আবূদাঊদ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৪১পৃ:) হাতের আঙ্গুলগুলোকে মিলিয়ে রাখতেন। (ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, বায়হাকী,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২২৭) এবং কেবলামুখে সোজা করে রাখতেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৭৩২ নং, বায়হাকী, ইবনে আবী শাইবা)

হাতের চেটো দু’টিকে কাঁধের সোজাসুজি দুই পাশে রাখতেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৭৩৪, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ৮০১নং) কখনো বা রাখতেন দুই কানের সোজাসুজি। (আবূদাঊদ, সুনান ৭২৩, ৭২৬, সহিহ,নাসাঈ, সুনান ৮৫৬নং)

কপালের সাথে নাকটিকেও মাটি বা মুসাল্লার সঙ্গে লাগিয়ে দিতেন। (আবূদাঊদ, সুনান, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩০৯ নং)

তিনি বলতেন, “সে ব্যক্তির নামাযই হয় না, যে তার কপালের মত নাককেও মাটিতে ঠেকায় না।” (দারাক্বুত্বনী, সুনান ১৩০৪ নং, ত্বাবারানী)

নামায ভুলকারী সাহাবীকে তিনি বলেছিলেন, “তুমি যখন সিজদাহ করবে, তখন তোমার মুখমন্ডল ও উভয়হাত (চেটো) কে মাটির উপর রেখো। পরিশেষে যেন তোমার প্রত্যেকটা হাড় স্বস্থানে স্থির হয়ে যায়।” (ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ ৬৩৮ নং)

এই সময় তাঁর উভয় হাঁটু এবং উভয় পায়ের পাতার শেষ প্রান্তও সিজদারত হত। পায়ের পাতা দু’টিকে তিনি (মাটির উপড়) খাড়া করে রাখতেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৮৭৯, সহিহ,নাসাঈ, সুনান ১০৫৩, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৩৮৪১নং, বায়হাকী) এবং খাড়া রাখতে আদেশও করেছেন। (তিরমিযী, সুনান ২২৮নং, হাকেম, মুস্তাদরাক) পায়ের আঙ্গুলগুলোকে কেবলার দিকে মুখ করে রাখতেন। (বুখারী ৮২৮নং, আবূদাঊদ, সুনান) গোড়ালি দু’টিকে একত্রে মিলিয়ে রাখতেন। ( ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ ৬৫৪ নং,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২২৮)

সুতরাং উক্ত ৭ অঙ্গ দ্বারা তিনি সিজদারত হতেন; মুখমন্ডল (নাক সহ্‌ কপাল) দুইহাতের চেটো, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের পাতা।

তিনি বলেন, “আমি সাত অঙ্গ দ্বারা সিজদাহ করতে আদিষ্ট হয়েছি; কপাল, -আর কপাল বলে তিনি নাকেওহাত ফিরান- দুই হাত (চেটো), দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের প্রান্তভাগ।” (বুখারী, মুসলিম, জামে ১৩৬৯ নং)

তিনি আরো বলেন, বান্দা যখন সিজদাহ করে, তখন তার সঙ্গে তার ৭ অঙ্গ সিজদাহ করে; তার চেহারা, দুইহাতের চেটো, দুই হাঁটু ও দুই পায়ের পাতা।” (মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে হিব্বান, সহীহ, সহিহ,নাসাঈ, সুনান ১০৪৭, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৮৮৫ নং)

তিনি বলেন, আমি (আমরা) আদিষ্ট হয়েছি যে, (রুকূ ও সিজদার সময়) যেন পরিহিত কাপড় ও চুল না গুটাই।” (বুখারী, মুসলিম, জামে ১৩৬৯ নং)

এক ব্যক্তি তার মাথার লম্বা চুল পিছন দিকে বেঁধে রাখা অবস্থায় নামায পড়লে তিনি বলেন, “এ তো সেই ব্যক্তির মত, যে তার উভয়হাত বাঁধা অবস্থায় নামায পড়ে।” (মুসলিম, সহীহ ৪৯২, আআহমাদ, মুসনাদ, ইবনে হিব্বান, সহীহ, আবূদাঊদ, সুনান, ৬৪৭ নং, নাসাঈ, সুনান, দারেমী, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ ১/৩০৪) তিনি চুলের ঐ বাঁধনকে শয়তান বসার জায়গা বলে মন্তব্য করেছেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৬৪৬ নং, তিরমিযী, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ) এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা আসছে ‘নামাযে নিষিদ্ধ বা মাকরুহ কর্মাবলী’র অধ্যায়ে।

আল্লাহর নবী (সাঃ) সিজদায় নিজেরহাতের প্রকোষ্ঠ বা রলা দু’টিকে মাটিতে বিছিয়ে রাখতেন না। (বুখারী ৮২৮ নং, আবূদাঊদ, সুনান) বরং তা মাটি বা মুসাল্লা থেকে উঠিয়ে রাখতেন। অনুরুপ পাঁজর থেকেও দূরে রাখতেন। এতে পিছন থেকে তাঁর বগলের সাদা অংশ দেখা যেত। (বুখারী ৩৯০, মুসলিম, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩৫৯নং) তাঁর হাত ও পাঁজরের মাঝে এত ফাঁক হত যে, কোন ছাগলছানা সেই ফাঁকে পার হতে চাইলে পার হতে পারত। (মুসলিম, আআহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ৮৯৮ নং,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২২৮, ইবনে হিব্বান, সহীহ)

সিজদার সময় তিনি কখনো কখনো হাত দুটিকে পাঁজর থেকে এত দূরে রাখতেন যে, তা দেখে কতক সাহাবী বলেন, ‘আমাদের মনে (তাঁর কষ্ট হ্‌চ্ছে এই ধারণা করে) ব্যথা অনুভব হত।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৯০০নং, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান)

এ ব্যাপারে তিনি আদেশ করে বলতেন, “যখন তুমি সিজদাহ কর, তখন তোমার হাতের দুই চেটোকে (মাটির উপর) রাখ এবং দুই কনুইকে উপর দিকে তুলে রাখ।” (মুসলিম, সহীহ ৪৯৪নং, আআহমাদ, মুসনাদ) “তোমরা সোজা ভাবে সিজদাহ কর। তোমাদের মধ্যে কেউ যেন কুকুরের মত দুই প্রকোষ্ঠকে বিছিয়ে না দেয়।” (বুখারী ৮২২, মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ) “তোমার দুই হাতের প্রকোষ্ঠকে হিংস্র জন্তুদের মত বিছিয়ে দিও না। দুই চেটোর উপর ভর কর ও পাঁজর থেকে (কনুই দু’টিকে) দূরে রাখ। এরুপ করলে তোমার সঙ্গে তোমার প্রত্যেক অঙ্গ সিজদাহ করবে।” (ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২২৭)।

সিজদার যিক্‌র ও দুআ।
সিজদায় গিয়ে মহানবী (সাঃ) এক এক সময়ে এক এক রকম দুআ পাঠ করতেন। তাঁর বিভিন্ন দুআ নিম্নরুপ:-
سُبْحَانَ رَبِّىَ الأَعْلى। (সুবহা-না রাব্বিয়্যাল আ’লা)
অর্থ- আমি আমার মহান প্রভুর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি। ৩ বার বা ততোধিক বার। (আবূদাঊদ, সুনান ৮৮৫নং, দারাক্বুত্বনী, সুনান, ত্বাহা, বাযযার, ত্বাবারানী)। একটি দুআ দিলাম। আরো অনেক দুআ আছে।

দীর্ঘ সিজদাহ।
মহানবী (সাঃ) এর সিজদা প্রায় রুকূর সমান লম্বা হত। অবশ্য কখনো কখনো কোন কারণে তাঁর সিজদাহ সাময়িক দীর্ঘও হত। শাদ্দাদ (রাঃ) বলেন, একদা যোহ্‌র অথবা আসরের নামায পড়ার উদ্দেশ্যে তিনি আমাদের মাঝে বের হলেন। তাঁর কোলে ছিল হাসান অথবা হুসাইন। তিনি সামনে গিয়ে তাকে নিজের ডান পায়ের কাছে রাখলেন। অতঃপর তিনি তকবীর দিয়ে নামায শুরু করলেন। নামায পড়তে পড়তে তিনি একটি সিজদাহ (অস্বাভাবিক) লম্বা করলেন। (ব্যাপার না বুঝে) আমি লোকের মাঝে মাথা তুলে ফেললাম। দেখলাম, তিনি সিজদাহ অবস্থায় আছেন, আর তাঁর পিঠে শিশুটি চড়ে বসে আছে! অতঃপর পুনরায় আমি সিজদায় ফিরে গেলাম। আল্লাহর রসূল (সাঃ) নামায শেষ করলে লোকেরা তাঁকে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি নামায পড়তে পড়তে একটি সিজদাহ (অধিক) লম্বা করলেন। এর ফলে আমরা ধারণা করলাম যে, কিছু হয়তো ঘটল অথবা আপনার উপর ওহী অবতীর্ণ হ্‌চ্ছে।’

সিজদার মাহাত্ম।
তুমি আল্লাহর জন্য অধিকাধিক সিজদা করাকে অভ্যাস বানিয়ে নাও; কারণ যখনই তুমি আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে তখনই আল্লাহ তার বিনিময়ে তোমাকে এক মর্যাদায় উন্নীত করবেন এবং তার দরুন একটি গুনাহ মোচন করবেন।” (মুসলিম ৪৮৮নং তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্‌)

সিজদাহ থেকে মাথা তোলা।
অতঃপর (সিজদার পর) নবী (সাঃ) ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তকবীর দিয়ে সিজদাহ থেকে মাথা তুলতেন। আর দুআ বলতেন।
وَارْفَعْنِيْ) وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ।
উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মাগফিরলী অরহামনী (অজবুরনী অরফা’নী) অহ্‌দিনী অ আ-ফিনী অরযুক্বনী।

অর্থ- হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, দয়া কর, (আমার প্রয়োজন মিটাও, আমাকে উঁচু কর), পথ দেখাও, নিরাপত্তা দাও এবং জীবিকা দান কর। (আবূদাঊদ, সুনান ৮৫০, তিরমিযী, সুনান ২৮৪, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৮৯৮নং,হাকেম, মুস্তাদরাক)

কোন কোন বর্ণনায় উক্ত দুআর শুরুতে ‘আল্লাহুম্মা’র পরিবর্তে ‘রাব্বি ‘ ব্যবহার হয়েছে। (ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৮৯৮ নং)
সর্বনিম্ন এই দুয়া টি বলবেন।
رَبِّ اغْفِرْ لِيْ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ
(রব্বিগফিরলী, রব্বিগফিরলী)
অর্থ- হে আমার প্রভু! আমাকে ক্ষমা কর, হে আমার প্রভু! আমাকে ক্ষমা কর। (আবূদাঊদ, সুনান ৮৭৪, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৮৯৭নং)

দ্বিতীয় সিজদাহ।
অতঃপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তকবীর দিয়ে তিনি দ্বিতীয় সিজদাহ করতেন।

দ্বিতীয় রাকআত।
অতঃপর নবী (সাঃ) মাটির উপর (দুই হাতের চেটোতে) ভর করে দ্বিতীয় রাকআতের জন্য উঠে খাড়া হতেন। (শাফেয়ী, বুখারী ৮২৪নং)। আর
——-এই নিয়মে বাকি রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে।

নামাজে তাশাহুদ পড়ার নিয়ম
দ্বিতীয় রাকআতের সকল কর্ম (শেষ সিজদাহ) শেষ করে মহানবী (সাঃ) দুই সিজদার মাঝের বৈঠকের মত বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসে যেতেন এবং ডান পায়ের পাতাকে খাড়া করে রাখতেন। (বুখারী, আবূদাঊদ, সুনান ৭৩১নং)

তাশাহুদে আঙ্গুল নড়ানোর বিধান
তিনি বাম হাতের চেটোকে বাম হাঁটুর উপর বিছিয়ে দিতেন। কখনো বাম হাঁটুকে বামহাতের লোকমা বা গ্রাস বানাতেন। ডান হাতের (তর্জনী ছাড়া) সমস্ত আঙ্গুলগুলোকে বন্ধ করে নিতেন। আর তর্জনী (শাহাদতের) আঙ্গুল দ্বারা কেবলার দিকে ইশারা করতেন এবং তার উপরেই নিজ দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতেন। (মুসলিম, সহীহ ৫৭৯, ৫৮০নং, আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ)।

তাশাহহুদের গুরুত্ব।
নবী মুবাশ্‌শির (সাঃ) প্রত্যেক দুই রাকআতে ‘তাহিয়্যাহ্‌’ (তাশাহহুদ) পাঠ করতেন। (মুসলিম, সহীহ ৪৯৮, আহমাদ, মুসনাদ)
বৈঠকের শুরুতেই তিনি বলতেন, “আত্‌ তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি—।” (বায়হাকী, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৬০পৃ:) দুই রাকআত পড়ে ‘তাশাহহুদ’ পাঠ করতে ভুলে গেলে তিনি তার জন্য ভুলের সিজদাহ করতেন। (বুখারী, মুসলিম, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩৩৮ নং)।

তৃতীয় রাকআত।
তাশাহহুদ শেষ করে তিন বা চার রাকআত বিশিষ্ট নামাযের জন্য যখন মহানবী (সাঃ) উঠতেন, তখন ‘তকবীর’ (আল্লাহু আকবার) বলতেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭৯৯নং)।

বৈঠক।
২য় রাক‘আত শেষে বৈঠকে বসবে। যদি তিন বা চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হয় বৈঠক হয়, তবে কেবল ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ে ৩য় রাক‘আতের জন্য উঠে যাবে। আর যদি শেষ বৈঠক অর্থাৎ এক বা দুই রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হয়, তবে ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ার পরে দরূদ, দো‘আয়ে মাছূরাহ ও সম্ভব হ’লে বেশী বেশী করে অন্য দো‘আ পড়বে। ১ম বৈঠকে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে এবং শেষ বৈঠকে ডান পায়ের তলা দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ বের করে বাম নিতম্বের উপরে বসবে ও ডান পা খাড়া রাখবে। এসময় ডান পায়ের আঙ্গুলগুলি ক্বিবলামুখী করবে। বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলি বাম হাঁটুর প্রান্ত বরাবর ক্বিবলামুখী ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে এবং ডান হাত ৫৩-এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ রেখে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত শাহাদাত অঙ্গুলি নাড়িয়ে ইশারা করতে থাকবে। মুছল্লীর নযর ইশারার বাইরে যাবে না।

সালাম।
আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ার পরে দরূদ, দো‘আয়ে মাছূরাহ ও সম্ভব হ’লে বেশী বেশী করে অন্য দো‘আ পড়বে। আর প্রথমে ডাইনে ও পরে বামে ‘আসসালামু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ (আল্লাহর পক্ষ হ’তে আপনার উপর শান্তি ও অনুগ্রহ বর্ষিত হৌক!) বলে সালাম ফিরাবে। আর নামাজ শেষ।

নারী ও পুরুষের নামাজের কোন পার্থক্য নেই। কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে।
পার্থক্য করেছে কিছু মানুষ। বিভিন্ন রকম যুক্তি দিয়ে। অথছ নামাজ সম্পর্কে এতো বেশি হাদিস আছে অথছ রসূল (সঃ) কখনোই বলেন নি যে নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য আছে। বা এই বিষয়ে কোন হাদিস ও নেই। যা কিছু আছে যুক্তি। আর কিছু হাদিসের নিজেস্য ব্যাখ্যা। যা শুরু নামাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকেন। আর এই ধরনে যুক্তি যদি কুরআনের ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয় তাহলে স্পষ্ট শির্ক হবে।
অথছ রসূল (সঃ) বলেন যে “তোমরা ছালাত আদায় কর সেভাবে, যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছ….)
বুখারী হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬; মিশকাত হা/৬৮৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৬।”

-সূরা আন আম আয়াত নং ১১৬
আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথামত চলেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহ্‌র পথ থেকে বিচ্যুত করবে । তারা তো শুধো ধারণার অনুসরণ করে; আর তারা শুধু অনুমান ভিত্তিক কথা বলে।

——–মহান আল্লাহ্ সবাইকে সঠিক বুঝে আমল করার তৌফিক দান করুন।

আমিন

Brong Answered on April 7, 2020.
Add Comment

১. নিয়ত – অন্তরে(যে কোনো ভাষায়)।

২. নামায শুরু– তাকবীরে তাহরীমা– আল্লাহুআকবার। অর্থঃ আল্লাহ মহান।

৩. হাত বেধে– সানা– সুবহানাকা আল্লাহুম্মা,ওয়া বিহামদিকা,ওয়া তাবারাকাসমুকা,ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা,
ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
অর্থঃ হে আল্লাহ ! তুমি পাক-পবিত্র , তোমারই জন্য সমস্ত্ প্রশংসা, তোমার নাম পবিত্র এবং বরকতময়, তোমার গৌরব অতি উচ্চ , তুমি ছাড়া অন্য কেহ উপাস্য নাই ।

৪. সানা পড়ার পর- আউযুবিল্লাহ– আউযুবিল্লা হিমিনাশ শায়তোয়ানির রজিম। অর্থঃ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

৫. আউযুবিল্লাহ পড়ার পর– বিসমিল্লাহ – বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। অর্থঃ পরমকরুনাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

৬. বিসমিল্লাহ বলে সূরা ফাতেহা এবং এর সাথে পবিত্র কোরআন থেকে যে কোনো একটি সূরা।

৭. তারপর ‘আল্লাহুআকবার’ বলে- রুকু- ‘সুবহানা রব্বীয়াল আযীম’(৩বার)। অর্থঃ আমি মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি।

৮. রুকু হইতে উঠিবার সময়– সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ।(১বার) অর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে, আল্লাহ তার কথা শ্রবন করেন।

রাব্বানা লাকাল হামদ অথবা রাব্বানা লাকাল হামদ হামদান কাছীরান ত্বাইয়্যেবান মুবারাকানফিহ।(ঈমামের পেছনে মুকতাদিরা বলবে) অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক অধিক অধিক প্রশংসা ও পবিত্রতা তোমারই। (এখানে রাব্বানা লাকাল হামদ পর্যন্ত পড়লেও হবে।)

৯. রুকু হইতে উঠিবার পর- সিজদাহ– “সুবহানা রাব্বীয়াল আ‘লা” (৩বার)। অর্থঃ ‘আমি আমার সুউচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি’।

এর পর আবার উঠে দাড়িয়ে হাত বেধে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য একটি সূরা পড়ে অনুরূপ করে তাশাহুদে বসতে হবে। ৪ রাকায়াত বিশিষ্ট নামাজ হলে শুধু ‘আত্তাহিয়াতু’ পড়ে আবার উঠে দাড়াতে হবে, আর ২ রাকায়াত বিশিষ্ট নামাজ হলে নিম্নক্ত ৪ টি দোয়া পড়ে সালাম ফিরাতে হবে।

১০. তাশাহুদ-

ক. আত্তাহিয়াতু- আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্ সালাওয়াতু, ওয়াত্ তাইয়িবাতু। আস্সালামু ‘আলাইকা আইয়্যুহান নাবীয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন। আশহাদু আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আননা মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

অর্থ : আমাদের সকল সালাম শ্রদ্ধা, আমাদের সব নামায এবং সকল প্রকার পবিত্রতা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে। হে নবী, আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক। আমাদের এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দাদের উপর আল্লাহ্র রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া (ইবাদাতের যোগ্য) আর কেউ নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল।

​খ. দুরুদ- আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ‘আলা আলি মুদাম্মাদিন। কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ‘আলা আলি মুদাম্মাদিন। কামা বারাক্তা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

অর্থ: হে আল্লাহ, দয়া ও রহমত করুন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন রহমত করেছেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও তার বংশধরদের উপর। নিশ্চই আপনি উত্তম গুনের আধার এবং মহান। হে আল্লাহ, বরকত নাযিল করুন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন করেছেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও তার বংশধরদের উপর। নিশ্চই আপনি প্রশংসার যোগ্য ও সম্মানের অধিকারী

গ. দোয়া মাছুরা- আল্লাহুম্মা ইন্নী যলামতু নাফসী যুলমান কাসীরা। ওয়া লা ইয়াগ ফিরুযুনূবা ইল্লা আংতা ফাগ্ফির লী। মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা্। ওয়ার হামনী। ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থঃ হে আল্লাহ্! আমি আমার নিজ আত্মার উপর বড়ই অত্যাচার করেছি, গুনাহ মাফকারী একমাত্র তুমিই; অতএব তুমি আপনা হইতে আমাকে সম্পূর্ণ ক্ষমা কর এবং আমার প্রতি দয়া কর। তুমি নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল দয়ালু।

ঘ. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :”তোমরা কেউ যখন তাশাহুদ পড় তখন চারটি জিনিষ থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রার্থনা করো। এই বলে দু’আ করবেঃ

আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিন আযা-বি জাহান্নামা, ওয়া মিন আযা-বিল ক্ববরী, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামা-তি, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল। (এই দোয়াটি দোয়া মাছুরা পড়ার পরে পড়তে হবে)
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে জাহান্নাম ও কবরের আযাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মসীহ দাজ্জালের ফিতনার ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [হাদিস-মুসলিম শরিফঃ ১২১১]

১১. সালাম ফিরানো- ‘আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ’ বলে ডানদিকে ও বামদিকে সালাম দিয়ে নামায শেষ করতে হবে।
অর্থঃ (হে মুক্তাদী ও ফেরেশ্তাগন) তোমাদের উপর আল্লাহর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোউক।

১২. দোয়া ও জিকির- সালাম ফিরানোর পর রয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পঠিত বেশ কিছু ফজিলতপূর্ন দোয়া ও জিকির। যেমনঃ ৩বার আস্তাগফিরুল্লাহ।অর্থ-আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।

১৩. মোনাজাত– রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল্ আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়াকিনা আযাবান্নার।
অর্থঃ “হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে দোযখের আযাব হতে রক্ষা কর।”(পবিত্র কোরআন,সূরা বাকারা- ২০১)।

* দোয়া কুনুত-(বিতর নামাযে পড়া হয়)- আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তায়ীনুকা, ওয়া নাস্তাগ্ফিরুকা, ওয়া নু’মিন বিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু ‘আলাইকা, ওয়া নুছনী আলাইকাল খাইর। ওয়া নাশ কুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ, ওয়া নাতরুকু মাঁই ইয়াফজুরুকা আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া লাকানুসল্লী, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস’আ, ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্ফারি মুলহিক।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি। আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি। আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।
                                                                                                                                                                           (সতর্কীকরণ: প্রত্যেকটি দোয়া আরবিতে শিখতে হবে।)

Default Answered on April 8, 2020.
Add Comment

Your Answer

By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.