কৃষিNo Comments

default thumbnail
লেবুর উপকারিতা > - স্বাস্থ্য.Com
কাগজী লেবু

কাগজী লেবু চাষ এর সময়ঃ
বর্ষাকাল কাগজী লেবু চাষের উপযুক্ত সময়।

লেবুর পরিচিতিঃ
লেবু পৃথিবীর সব জাতির জন্য অন্যতম সহায়ক সবজি/ফল। তাই আমাদের দেশেও প্রায় সব অঞ্চলেই এখন কমবেশি লেবু চাষ হচ্ছে। লেবুর স্বাদ বৃদ্ধির ভূমিকা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে বিশেষ খাদ্যগুণ। বিশেষ করে লেবুকে ‘সি’ ভিটামিনের ডিপো বলা হয়ে থাকে। ছোট বড় সবার জন্য লেবু এক আশ্চর্য গুণসম্পন্ন সবজি এবং ভেষজ। আমাদের দেশে শতকরা ৯১ জন লোক ভিটামিন ’সি’ এর অভাবে ভুগছেন। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের দৈনিক গড়ে ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ’সি’ খাওয়া দরকার। ভিটামিন ’সি’ সমৃদ্ধ ফলের মধ্যে লেবুই একমাত্র ফল যা সারা বছর কম বেশি পাওয়া যায়।

✓ লেবুর ভেষজ গুণঃ
লেবুর রস মধু বা আদা বা লবণ এর সাথে মিশিয়ে পান করলে ঠাণ্ডা ও সর্দি কাশি উপশম হয়।

✓ লেবু চাষে উপযুক্ত জমি ও মাটি নির্বাচনঃ
হালকা দোআঁশ ও নিকাশ সম্পন্ন মধ্যম অম্লীয় মাটিতে লেবু ভাল হয়।

✓ লেবুর জাত পরিচিতিঃ

*‌ বারি লেবু-১ (এলাচী লেবু):
ঘ্রাণ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। গাছ আকারে বড়। পাতা বড় ও প্রশস্ত। পরিচর্যা পেলে গাছ বছরে দু’বার ফল দেয়। জুলাই-আগস্ট মাসে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। পূর্ণবয়স্ক গাছ ১৫০ টি পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। আকারে বড়, ডিম্বাকৃতি এবং প্রতিটি ফলের গড় ওজন ১৯৫ থেকে ২৬০ গ্রাম। এলাচী লেবুর খোসাও খাওয়া যায়।

বারি লেবু-২ঃ
মধ্যম আকৃতির ও ঝোপের মতো গাছ। সারা বছর ফল দেয়। ফল গোলাকার, মধ্যম ওজনের। ত্বক মসৃণ এবং বীজের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। এই লেবু সারা দেশেই চাষাবাদের উপযোগী।

‌বারি লেবু-৩ঃ
একটি দেরীতে হওয়া (নাবি) জাত বারি লেবু-৩। গাছ ও পাতা ছোট আকৃতির। ফল গোলাকার ও ছোট। ত্বক খুবই মসৃণ, খোসা পাতলা এবং বীজের সংখ্যা ১৮-২২টি। রসের পরিমাণ খুব বেশি (৩৭.৭%)। সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। নিয়মিত খাবার, সেচ ও পরিচর্যা পেলে বছরে দু’বার ফল পাওয়া যায়। এটি সারা দেশেই চাষাবাদের জন্য উপযোগী।


√√ থাই সিডলেস এবং চায়না-৩ঃ
সিডলেস উচ্চ ফলনশীল জাতের বারো মাসী লেবু। বর্তমানে বাংলাদেশে এই লেবু ব্যাপক চাষ হচ্ছে। প্রায় সব ধরনের মাটিতে এই লেবু চাষ সম্ভব। এই লেবুর কয়েকটি আলাদা বৈশিষ্ট্য হলোঃ

(১) চারা রোপণের ৭/৮ মাসের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়।
(২) যৌবনপ্রাপ্ত বয়সে একেকটি গাছ থেকে বছরে গড়ে ১০০০/১৫০০ টি লেবু পাওয়া যায়।
(৩) এই লেবুতে কোনো বীচি থাকে না।
(৪) লেবুতে প্রচুর রস এবং সুগন্ধি আছে।
(৫) মাঝারি আকারের এবং বাজারদর খুব ভালো।

✓ চারা রোপণঃ
গুটি কলম ও কাটিং তৈরি করে মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য আশ্বিন মাসে ২.৫ মিটার দূরে দূরে রোপণ করা হয়। সেচের ব্যবস্থা থাকলে বারো মাস‌ই লেবু গাছ রোপন করা যায়।

✓ সার ব্যবস্থাপনাঃ
প্রতি গাছের জন্য টিএসপি সার ৪০০ গ্রাম, এমওপি সার ৪০০ গ্রাম, ইউরিয়া সার ৫০০ গ্রাম ও পঁচা গোবর ১০/১৫ কেজি প্রয়োগ করতে হয়। সার তিনভাগে যার প্রথম কিস্তি মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক মাসে, ২য় কিস্তি মধ্য মাঘ থেকে মধ্য ফাল্গুন মাসে এবং ৩য় কিস্তি মধ্য জৈষ্ঠ্য থেকে মধ্য আষাঢ় মাসে প্রয়োগ করতে হয়।

✓ ডাল-পালা ছাঁটাইঃ
প্রতি বছর মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক মাসে গাছের অবাঞ্ছিত শাখা বা ডাল-পালা ছাঁটাই করতে হয়।

✓ সেচ ও আগাছা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
খরা মৌসুমে ২-৩ বার সেচ দেয়া প্রয়োজন। পানি যাতে না জমে থাকে সে বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

✓ পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনাঃ
• পোকার নামঃ লেবুর প্রজাপতি পোকা।
• ক্ষতির নমুনাঃ এ পোকার কীড়া পাতার কিনারা থেকে খেতে শুরু করে এবং সম্পূর্ণ পাতা খেয়ে ফেলে।
• নিধন ব্যবস্থাপনাঃ ডিম ও কীড়াযুক্ত পাতা সংগ্রহ করে মাটির নীচে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হয়। আক্রমণ বেশি হলে ডাইমেক্রন ১০০ ইসি ১ মি.লি অথবা সেভিন ৮৫ এসপি ১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর স্প্রে করতে হয়।

• পোকার নামঃ লেবুর লাল ক্ষুদ্র মাকড়।
• ক্ষতির নমুনাঃ মাইট লেবু গাছের পাতা ও ফলের সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং ফলের গায়ে সাদা আবরণ দেখা যায়। পাতার নীচের দিকে লক্ষ্য করলে ক্ষুদ্র মাইট চলাচল করতে দেখা যায়।
• নিধন ব্যবস্থাপনাঃ মাকড়সহ আক্রান্ত পাতা তুলে ধ্বংস করা। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ২ মি.লি ইথিয়ন ৪৬.৫ তরল বা নিউরণ ৫০০ তরল মিশিয়ে লেবুর পাতা ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।

✓ ফসল তোলাঃ
ফল পূর্নতা প্রাপ্তি হলে সবুজ থাকা অবস্থায় সংগ্রহ করতে হবে।

✓ লেবুর প্রচলিত ব্যবহারঃ
লেবুর কদর সাধারণত তার রসের জন্য। এর শাঁস এবং খোসাও ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন কাজে। কিন্তু প্রধানত সর্বত্র লেবুর রসই ব্যবহৃত হয়। লেবুর আছে অনেক গুণ। ১০০ গ্রাম লেবুতে প্রায় ৫৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি বা এসকরিক এসিড পাওয়া যায়। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধকারী কোষের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে বা ক্ষত হলে দ্রুতগতিতে কোলাজেন কোষ উপাদান তৈরি করে ক্ষত নিরাময়েও সাহায্য করে এই ভিটামিন সি। লেবুর সাইট্রিক এসিড ক্যালসিয়াম নির্গমন হ্রাস করে পাথুরী রোগ প্রতিহত করে। জ্বরে কোনকিছুই যখন খেতে ভাল লাগে না তখন লেবুই একমাত্র ভরসা। লেবু হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। রূপচর্যায় লেবুর ব্যবহার অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। কাপড়ে দাগ পড়লে লেবুর রস দিয়ে ঘষলে দাগ উঠে যায়। বয়সজনিত মুখের দাগ সারাতে লেবুর রস কার্যকরী। লেবুর রস ব্যবহারে মুখের ব্রণও দূর হয়। লেবু দেহের ওজন কমায়। লেবুর মধ্যে এমন পদার্থ আছে যা কিনা শরীরের অতিরিক্ত মেদকে কমিয়ে দেয়। ফলে রোগ সংক্রমণও কমে যায়। সম্প্রতি এক গবেষণাতে এ তথ্য‌ও প্রমানিত হয়েছে যে, করোনা প্রতিরোধে লেবুর বিকল্প নেই।
এত যার গুণ সেই লেবুর চাষ পদ্ধতি আবার খুবই সহজ। বাড়ির ছাদ এমনকি বারান্দায় ছোট টবেও এর চাষ সম্ভব।


✓ কবে কিভাবে চারা লাগাবেনঃ
৫০ ভাগ মাটি, ২০ ভাগ বালি, ৩০ ভাগ পঁচা গোবর/জৈব সার মিশাতে হবে। একটি বার ইঞ্চি টবের জন্য ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৫০গ্রাম পটাশ, ১০গ্রাম চুন এবং ১৫০ গ্রাম হাড়ের গুড়া একত্রে মিশিয়ে রেখে দিতে হবে ১২-১৫ দিন। অতঃপর একটি লেবুর সুস্থ সবল ও রোগমুক্ত কলম/ চারা ঐ টবে রোপন করতে হবে।
লেবুতে সাধারণত ডাইব্যাক নামক এক ধরনের রোগ দেখা যায়। তাই কলমের চারাটি যাতে রোগাক্রান্ত না থাকে তা দেখে নিতে হবে। লেবু জাতীয় সকল গাছেই সাধারণত পানি খুব কম প্রয়োজন হয়। চারা লাগানোর প্রথমদিকে পানি আরও কম দিতে হয়।


✓ পরিচর্যাঃ
চারা লাগানোর পর প্রথম ২-৩ মাস পানি দেওয়া এবং আগাছা পরিষ্কার করা ছাড়া আর তেমন কিছুই করতে হবেনা। গাছ একটু বড় হলে ২০ দিন অন্তর অন্তর সরিষার খৈল পঁচা পানি হালকা করে গাছের গোড়ায় দিতে হবে। ৭/৮ মাসের মধ্যে লেবু গাছে ফল ধরবে। বর্ষা আসার পূর্বে সাতদিন অন্তর অন্তর কয়েকবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে ভাল হয়। এছাড়াও বছরে তিন থেকে চারবার কোন ভাল কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। তবে লেবু গাছে ফুল থাকা অবস্থাতে কীটনাশক স্প্রে না করাই ভাল। এতে পরাগায়নে ব্যাঘাত ঘটায়। গাছ লাগানোর দুই বছর পর থেকে প্রতি বছর বর্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে টবের গাঁ ঘেঁষে দুই ইঞ্চি পরিমান প্রস্থে এবং ছয় থেকে আট ইঞ্চি গভীর করে মাটি ফেলে দিয়ে নতুন সার মিশ্রিত মাটি দিতে হবে। আমাদের দেশের আবহাওয়া লেবু চাষের জন্য বেশ উপযোগী। বিশেষ করে টবে লেবুর ফলন খুব ভাল হয় এবং অতি সহজেই।

✓ কলম করার পদ্ধতিঃ
লেবু গাছে বিভিন্ন ধরনের কলম হলেও সাধারণত গুটি কলমই বেশী জনপ্রিয়। খুব সহজেই লেবুর গুটিকলম করা যায়। সাধারণত গুটিকলম করতে হয় বর্ষাকালে। পানি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে সারা বছরই গুটি কলম করা যায়। গুটিকলমের জন্য একটি ৬ মাস বয়সী পেন্সিলের মত মোটা ডাল নির্বাচন করতে হবে। ডালের ডগা থেকে একফুট নিচে একটা গীটের গোঁড়ায় এক ইঞ্চি পরিমান ছাল ডাল থেকে তুলতে হবে। কাঠের মধ্যে যে পিচ্ছিল পদার্থ বিদ্যমান থাকে তা একটি শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। অতঃপর গোবর মিশ্রিত মাটি দিয়ে ঐ জায়গা ভালভাবে ঢেকে দিতে হবে। তবে মাটি অবশ্যই কাদামাটির মত নরম করে নিতে হবে। একটি মোটা পলিথিন দিয়ে ঐ জায়গাটুকু ভালভাবে ঢেকে দুই দিকের মাথা সুতলী দিয়ে শক্ত করে এমন ভাবে বেঁধে দিতে হবে যেন ভিতরে আলো বাতাস না ঢুকে। ২৫/২৭ দিনের মধ্যেই শিকড় গজিয়ে যায়। কিন্তু কাটার উপযোগী হয় আরও কিছু দিন পর।

সুস্থ-সবল, রোগমুক্ত সিডলেস (চায়না-৩) এবং রজনী গন্ধা জাতের বারো মাসী লেবুর গুটি কলম ও চারার জন্য যোগাযোগ করুনঃ ০১৫১৫৬৭৭৩১১

Be the first to post a comment.

Add a comment