ইমামের পেছনে থাকা অবস্থায় কি মুক্তাদিগণ সূরা ফাতিহা পড়বে? না কি সূরা ফাতিহা না পড়ে ইমামের কিরাআত মনোযোগ সহকারে শুনবে?

ইমামের পেছনে থাকা অবস্থায় কি মুক্তাদিগণ সূরা ফাতিহা পড়বে? না কি সূরা ফাতিহা না পড়ে ইমামের কিরাআত মনোযোগ সহকারে শুনবে?

Add Comment
1 Answer(s)

ইমাম সুরা ফাতিহা পড়ে যখন আরেকটি সুরা মিলিয়ে পড়তে শুরু করবে, সে সময় মুসল্লিরা কি পেছনে থাকা অবস্থায় মনে মনে সুরা ফাতিহা পড়ে নিবে? নাকি ইমাম সুরা ফাতিহা পড়ার পর যে সুরাটি মিলিয়ে পড়ছে সেটি মনোযোগ দিয়ে শুনবে? যদি মুসল্লীরা মনে মনে সুরা ফাতিহা পড়ে তাহলে ইমামের চলমান ২য় সুরার প্রতি মনোযোগ আসে না। এ ক্ষেত্রে কি কোন গুনাহ হবে বা এভাবে সালাত শুদ্ধ হবে?

উত্তর:
ইমামের পেছনে থাকা অবস্থায় মুক্তাদিগণ সূরা ফাতিহা পড়বে কি না এ বিষয়টি মতবিরোধপূর্ণ বিষয়। তবে অনেক আলিমের মতে সূরা ফাতিহা পড়া সালাতের রোকন। এটি ছাড়া সালাত শুদ্ধ হবে না। কারণ হাদীসগুলোর ভাষা থেকে সেটাই অনুধান করা যায় এবং দলীলের আলোকে এটিই অধিক অগ্রাধিকারযোগ্য মত ইনশাআল্লাহ।

🌀 এ বিষয়ে নিম্নাক্ত হাদীসটি দেখুন:
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ صَلَّى صَلَاةً لَمْ يَقْرَأْ فِيهَا بِأُمِّ الْقُرْآنِ فَهِيَ خِدَاجٌ فَهِيَ خِدَاجٌ فَهِيَ خِدَاجٌ غَيْرُ تَمَامٍ
“যে ব্যক্তি সলাত আদায় করল, যার মধ্যে ‘কুরআনের মা’ অর্থাৎ সূরাহ ফাতিহা পাঠ করল না, তার ঐ সলাত ত্রুটিপূর্ণ, তার সলাত ত্রুটিপূর্ণ, তার সলাত ত্রুটিপূর্ণ, অসম্পূর্ণ।”

বর্ণনাকারী বলেন, আমি আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি যখন ইমামের পিছনে থাকি, তখন কিভাবে পড়ব? তিনি আমার বাহু চাপ দিয়ে বললেন,
“হে ফারসী! তুমি মনে মনে পাঠ করবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ মহান আল্লাহ বলেন, আমি সলাতকে (অর্থাৎ সূরাহ ফাতিহাকে) আমার ও আমার বান্দাহ‘র মধ্যে দু‘ ভাগ করে নিয়েছি। যার এক ভাগ আমার জন্য, আরেক ভাগ আমার বান্দাহ‘র জন্য এবং আমার বান্দাহ আমার কাছে যা চায়, তাকে তাই দেয়া হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা সূরাহ ফাতিহা পাঠ করো। বান্দাহ যখন বলে, ‘‘আল হামদু লিল্লাহি রব্বিল ‘আলামীন’’- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমার প্রশংসা করেছে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, ‘‘আর-রহমানির রহীম’’- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমার গুণগান করেছে। বান্দাহ যখন বলে, ‘‘মালিকি ইয়াওমিদ্দীন’’- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমাকে সম্মান প্রদর্শন করেছে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, ‘‘ইয়্যাকা না‘বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্‌তাঈন’’- তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে সীমিত এবং আমার বান্দাহ যা প্রার্থনা করেছে- তাই তাকে দেয়া হবে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, ‘‘ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাকীম, সীরাতালাযীনা আন‘আমতা ‘আলাইহিম গাইরিল মাগদূবি ‘আলাইহিম ওয়ালাযযল্লীন’’- তখন আল্লাহ বলেন, এর সবই আমার বান্দাহ‘র জন্য আমার বান্দাহ আমার কাছে যা চেয়েছে, তাকে তাই দেয়া হবে।
সহীহ : মুসলিম।[মুসলিম (অধ্যায়ঃ সালাত, অনুঃ ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব)]

🔰 ইমামের কিরআত শোনা এবং মুক্তাদির সূরা ফাতিহা পাঠ কি সাংঘর্ষিক?

যোহর, আসর, মাগরিবের শেষ রাকাআত ও ইশার শেষ দু রাকাআতে ইমাম নিরবে কিরাত পাঠ করে সে সময় ইমামের পেছনে ইক্তিদা করা অবস্থায় মনে মনে সুরা ফাতিহা পড়লে তো ইমামের কেরাআত শুনার সমস্যা নাই। কারণ এ সব নামাযে ইমাম নিরবে কিরাআত পাঠ করেন।
অনুরূপভাবে দূরত্বের কারণে অথবা বধির হওয়ার কারণে মুক্তাদি যদি ইমামের কিরাআত শুনতে না পায় তাহলেও সে ক্ষেত্রে সে কিরাাআত পাঠ করতে আপত্তি নাই।
সুতরাং এ সব ক্ষেত্রে ইমামের কিরাআত শোনার সাথে মুক্তাদির সূরা ফাতিহা পড়ার কোন সাংঘর্ষিকতা নাই।

কিন্তু মাগরিব ও ইশার ১ম দু রাকাআত ও ফজরের দু রাকাআত ফরয নামায যখন ইমাম উচ্চ আওয়াজে কিরআত পাঠ করে তখন মুক্তাদি কিভাবে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে?

ক্ষেত্রে ইমাম সূরা ফাতিহা পাঠ করার সময় শ্বাস নেয়ার সময় থামলে সে সময় সে পড়ে নিবে, কিন্তু ইমাম যদি তাড়াতাড়ি পড়েন বা মুক্তাদি দেরিতে নাামযে শরীক হয় আর সে সময় ইমাম সূরা ফাতিহা শেষ করে অন্য কিরআত পাঠ করেন তাহলেও মুক্তাদি মনে মনে সূরা ফাতিহা শেষ করে তারপর ইমামের কিরাআতের বাকি যতটুকু পাবে ততটুকু মনোযোগ দিয়ে শুনবে।
কারণ, আল্লাহ তালাআ তার নবীর উপর কুরআন নাযিল করেছেন আর তাতে কুরআন পড়ার সময় চুপ থেকে মনোযাোগ সহকারে শুনার নির্দেশ এসেছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
“আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়।” (সূরা আরাফ/২০৪)

আমরা জানি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের সবচেয়ে বড় ব্যাখ্যাদাতা। আর তিনি নিজেই আমাদেরকে ইমামের পেছনে কেবল সুরা ফাতিহা পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন নিম্নাক্ত হাদীসটি:
রাসূল সা. সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন,
«لَعَلَّكُمْ تَقْرَءُونَ خَلْفَ إِمَامِكُمْ?» قُلْنَا: نَعَمْ. قَالَ: «لَا تَفْعَلُوا إِلَّا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ, فَإِنَّهُ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِهَا

“তোমরা হয়তো ইমামের পিছনে (কুরআন) পড়। আমরা বললাম, হ্যাঁ, পড়ি। তিনি বললেন, সূরা ফাতিহা ব্যতীত আর কিছু পড়বে ন। কেননা, যে এটা পড়েনা তার সালাত হয় না।”
(উক্ত হাদীসটিকে ইমাম নওবী, ইবনে হাজার আসকালানী, ইবনুল মুলাক্কিন, বাইহাকী, আলবানী সহ অসংখ্য মুহাদ্দিসগণ হাসান/সহীহ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।)
তাহলে বুঝা গেল, আমরা ইমামের পেছনে ইক্তিদা করা অবস্থায় মুক্তাদিগণ কেবল সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। এরপর ইমামের বাকি কিরাআত মনোযোগ দিয়ে শুনবে। এভাবে করলে আয়াত ও হাদীস উভয়টির প্রতি আমল করা সম্ভব। আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬▬✿✿✿▬▬▬▬▬

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

Add Comment

Your Answer

By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.