কোরবানীর পশু যবাই করার সময় কি কোরবানী দাতার নাম উচ্চারণ করা কি জরুরী?
আল্লাহর উপর ভরসা করে আমি তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি।
কোরবানী দাতা যদি ছুরি চালাতে সক্ষম হন এবং যবাই করার মত সাহসের অধিকারী হয়ে থাকেন তবে এক্ষেত্রে সুন্নাত হচ্ছে কোরবানী দাতা নিজ হাতে কোরবানীর পশু যবাই করবেন। অন্য কেউ যবাই করলেও জায়েয হবে।
কিন্তু আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে যে, সামাজিক মোল্লা বা সমাজের মসজিদের ইমামই সকলের কোরবানীর পশু যবাই করে থাকেন। এটি যে সুন্নাত বিরোধী, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কেননা কোরবানীর পশু যবাই কররার জন্য বড় আলেম হওয়া জরুরী নয়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ঈদের দিন ইমাম সাহেব ছুরি হাতে নিয়ে গ্রাম বা মহল্লার সকলের কোরবানী একাই যবাই করেন। এতে করে অনেকের কোরবানী যবাই করতে যথেষ্ট বিলম্ব হয়ে যায়। কারণ একজন ব্যক্তির পক্ষে অনেকগুলো কোরবানীর পশু যবাই করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইমাম সাহেবকে দেখা যায় যে, তিনি ঈদের নামাযের পর সমাজের প্রভাবশালী লোকদের কোরবানীর পশুগুলো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যবাই করে থাকেন। এতে সাধারণ মানুষগণ বিড়ম্বনার শিকার হয়ে থাকেন, যা ইসলাম মোটেই সমর্থন করে না।
কোরবানী যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ একটি এবাদত তাই কারও অপেক্ষায় না থেকে নিজ হাতে কোরবানী যবাই করাই উত্তম। এটিই সহীহ হাদীছের কথা।
এবার মূল প্রশ্নে আসি। কোরবানীর পশু যবাই করার সময় কি কোরবানী দাতার নাম উচ্চারণ করা কি জরুরী?
কোরবানী দাতার নিয়ত যদি ঠিক থাকে এবং তা যদি হালাল উপার্জন থেকে হয়ে থাকে তাহলে পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মুখে কোরবানী দাতার নাম উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই। যবাই করার সময় শুধু بسم الله ألله أكبر বলাই যথেষ্ট। আর যদি কেউ বাড়িয়ে বলতে চায় তাহলে বলবেঃ
أللهم تقبل هذا مني ومن أهل بيتي
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি ইহা আমার পক্ষ হতে এবং আমার পরিবারের সকল সদস্যের পক্ষ হতে কবুল করুন। অথঃপর ছুরি চালানোর সময় বলবেঃ بسم الله والله أكبر
কিন্তু আমাদের সমাজে পশু যবাই করার সময় কোরবানী দাতার নামটি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে দেখা যায়, যার কোন শরঈ ভিত্তি নেই। অনেক সময় সাতভাগে কোরবানী দেয়ার সময় একটি কাগজে সাতটি নাম লিখে তা ধারাবাহিকভাবে উচ্চারণ করতে দেখা যায়। ইমাম বা মোল্লা সাহেব ছুরি হাতে নিয়ে মাটিতে শায়িত পশুর গলা বরাবর দাঁড়িয়ে থাকেন আর অন্য একজন অংশীদারদের নামগুলো উচ্চারণ করেন। এই নিয়মটি হাদীছের কিতাবে খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে কোরবানীর পশু নিজ হাতে যবাই করলে দুআ স্বরূপ উপরের বাক্যটি পাঠ করতে পারেঃ
أللهم تقبل هذا مني ومن أهل بيتي
আর অন্য কেউ যবাই করলে বলতে পারে أللهم تقبل هذا عن فلان অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনি এই কোরবানী অমুকের পক্ষ হতে কবুল করুন। শুধু একক নাম উল্লেখ করা ঠিক নয়।
পরিশেষে বলতে চাই, আসুন আমরা এবারের ঈদে নিজের কোরবানী নিজ হাতেই যবাই করি। আপনি কি প্রস্তুত?
আল্লাহ তাআলা কোরবানীসহ আমাদের সকল এবাদত কবুল করুন।
আমীন।