জনম দুখিনির ঘর – অরুণ মিত্র এর কবিতা
জনম দুখিনির ঘর
অরুণ মিত্র
দুব্বার কয়েকটি ছোপ
ধানের গুচ্ছের একটু ছটা
কয়েকটা দয়েল ফিঙে টুনটুনি
নরম হাসির আভা
দু-একজনের ঠোঁট আদর করার মতো খোলা
এই সব নিশানা ধরেই
এখানে ফিরেছি আমি।
দুরন্ত রোদের টিলা পেরিয়ে এলাম,
কুয়াশা প্রান্তর বনবাদাড়ের রাত
আমায় ঘোরায়নি আর,
অচেনা হাটূরে আনাগোনা ক্রমে ক্রমে মুছে গেছে,
নানান জিঞ্জাসাবাদ বিচিত্র ভাষার স্তূপ ঠেলে
এখন আমার কান শুদ্ধ এক ধ্বনিতে পেতেছি।
সেই পিদ্দিমের আলো দেখা যায়,
জন্মদুখিনির ঘর।
কবে আমি বড়ো হয়ে তাকে ছেড়ে চ’লে আসি
তবু তার আঁচলের হাওয়া আজও আমার নিভূতে,
ঘুমের সময় যত গল্প ছিল আমাদের
অন্ধকার ভরাত যা সবই সে তো রূপকথার,
তবু দুঃখ ঘোচানোর গোপনতা নিয়ে
গল্পের রাতের মধ্যে অভিভুত আমরা ঘুমোতাম।
তারপর একদিন বেরিয়েছি,
সন্ধ্যার সীমান্তজোড়া পাহাড় ডিঙিয়ে
কতদূর চ’লে গেছি,
বিভূঁই মনের মধ্যে পথ খুঁজে কতবার দিশেহারা,
রূপকথার কোনো দেশ দেখিনি তো।
আজ দুব্বা ধান পাখি দেখে
ভালোবাসার দু-একটা মুখ দেখে
এখানে ফিরেছি
পিদ্দিপ জ্বলার একলা ঘর,
ওই আলো অন্ধকার আমার নাড়িতে বাজে,
আমার শ্রবণ একক স্বরের স্থিতি পায়ঃ
ভাঙাচোরা বুড়ি গলা
বিশুদ্ধ অতলস্পর্শ,
ঘরে ফিরতে বলে ডাকে।
সলতেটা নেভার পরও এই ডাক ঘুরতে ঘুরতে থাকবে
যতক্ষণ না আমি
রাত্তিরের গল্পগুলো মনে চেপে
আবার দাঁড়াব গিয়ে দুঃখের দুয়োরে ।।