নদ ও নদীর মধ্যে পার্থক্য কি?
যে আমাদের মাঝে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ নদ-নদীর পার্থক্য জানেনা, নদ ও নদীর মধ্যে পার্থক্য কি?
অনেকই ভুল উত্তর দেয় এই প্রশ্নের।
১। যে নদীর কোন শাখা নদী নাই কিন্তু উপনদী থাকতে পারে তাদের নদ বলে। আর যে নদীর শাখা নদী বা শাখা নদী ও উপনদী আছে তাদের নদী বলে। (NB: এই সংজ্ঞা টির কোন ভিত্তি নেই )
তার আগে আপনাকে শাখা নদী ও উপনদীর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে।
শাখা নদী = যদি কোন নদী থেকে অন্য একটা নদীর উৎপত্তি হয় তাহলে সেই অন্য নদীকে ঐ নদীর শাখা নদী বলে।
উপনদীর = আবার অন্য কোন নদী যদি আর একটা নদীর সাথে মিলিত হয় তাহলে সেই অন্য নদীকে সেই আর একটা নদীর উপনদী বলে।
২। ভূগোলের দৃষ্টিতে নদ ও নদীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
৩. নদ এবং নদীর পার্থক্য বোঝাতে এ পর্যন্ত একটি পদ্ধতি বা নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে।নিয়মটি হলো :স্ত্রী এবং পুরুষ নাম জ্ঞাপক শব্দ, সাধারণত স্ত্রী নামে যে প্রবাহগুলো রয়েছে সেগুলোকে আমরা নদী নামে অভিহিতকরে আসছি। যেমন- গঙ্গা, সরস্বতী,যমুনা, পদ্মা, গৌরী, ভাগীরথী, চিত্রা, নর্মদা,কাবেরী, কৃষ্ণা ইত্যাদি।
আবার পুরুষনামে যেগুলোর প্রবাহসেসবকে বলা হচ্ছে নদ। যেমন- ব্রহ্মপুত্র, নারদ,ভৈরব, কুমার, কপোতাক্ষ, মুসা খান,মির্জা মাহমুদ ইত্যাদি।
আসলে এই সূত্র নিয়েও কিছুটা বিতর্ক আছে।অধিক গ্রহণযোগ্য আরেকটি সূত্র হচ্ছে, নামেরশেষে যদি আকার, এ কার, ও কার, ঔ কার ইত্যাদি থাকে তবে নিশ্চিতভাবে সেই প্রবাহগুলো নদী নামে অভিহিত হবে। নামেরশেষে এগুলো না থাকলে এবং শুধু হ্রসুকার থাকলে অবশ্যই নদ হবে। যেমন- আড়িয়ালখাঁ-এটি পুরুষ নাম জ্ঞাপকহলেও যেহেতু শেষে আকার রয়েছে সে জন্য এটি নদ না হয়ে নদী।
কিন্তু মুসা খান ন-এরপরে আকার একার কিছুনেই, যে কারণে এটি নদ। সিন্ধু যেহেতু হ্রসুকার রয়েছে শেষে, যে কারণে এটি নদ। একইভাবে বালু-এটিও নদ। নীলস্ত্রী নাম জ্ঞাপক একটি প্রবাহ। যেহেতু এরশেষে আকার, এ কার কিছু নেই, সেইসূত্রে এটি নদ। এভাবে ঘাঘটস্ত্রী নামক জ্ঞাপক হলেও ট-এর পরে আ-কার,এ-কার নেই, যে কারণে এটিও নদ।
নদ আর নদীর মধ্যে উৎপত্তি বা প্রকৃতিগত কোন পার্থক্য নাই, তবে যেসব নদীর নাম পুরুষবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয় সেসব নদীকে নদ বলে।
আমাদের উপমহাদেশের সংস্কৃতিতে নদ-নদীকে নারী-পুরুষ হিসেবে ভাগ করার পেছনে পুরাণ, ধর্মীয় ও লোকজ বিশ্বাসের প্রভাবই মুখ্য। শাখা থাকুক আর নাই থাকুক, ব্রহ্মার পুত্র ব্রহ্মপুত্রকে তো আর আপনি মেয়ে ভাবতে পারেন না; তেমনিভাবে হিমালয়দুহিতা গঙ্গা, সে তো নারীই হবে। নদ ও নদীর সাথে শাখা থাকা না থাকার কোন সম্পর্ক নেই। এই দুয়ের মাঝে যা পার্থক্য আছে তা হল ব্যাকরণগত।
বাংলা, হিন্দি, ফারসি ইত্যাদি ভাষার ক্ষেত্রে, পুরুষবাচক শব্দ সাধারণত অ-কারান্ত এবং নারীবাচক শব্দ আ-কারান্ত বা ই,ঈ-কারান্ত হয়। যেমনঃ রহিম (অ-কারান্ত) -রহিমা (আ-কারান্ত, নামের শেষে আ আছে ) , রজক (অ-কারান্ত) – রজকী ( ঈ-কারান্ত, নামের শেষে ঈ আছে )। তেমনিভাবেঃ ফুল-ফুলি, কুমার-কুমারী, নদ-নদী ইত্যাদি |
তাই যে সকল ‘নদীর’ নাম পুরুষবাচক অর্থাৎ অ-কারান্ত তারা “নদ”
আর যে সকল ‘নদীর’ নাম নারীবাচক অর্থাৎ আ-কারান্ত বা ঈ,ই-কারান্ত তারা নদী।
এই কারণে ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী থাকলেও এটি নদ। একই কারণে নীল ‘নদী’ নয় ‘নদ’।
অনেকে আমাজন নদী বললেও উপরে উল্লেখিত কারণে তা হবে নদ।
তাই এখন থেকে যে নদীর নাম অ-কারান্ত দেখবেন, নিশ্চিন্তে তাকে নদ বলুন।
সাধারণত বাংলা , হিন্দি ,ফারসি ইত্যাদি ভাষার ক্ষেত্রে পুরুষবাচক শব্দ অ-কারান্ত এবং নারী বাচক শব্দ আ কারান্ত বা ই , ঈ -কারান্ত হয় ।
যেমন- নদ-নদী , কুমার-কুমারী ইত্যাদি।
নদঃ সুতরাং যে সকল নদীর নাম পুরুষবাচক সেগুলোর পর নদ থাকে ।
যেমন: নীলনদ , কপোতাক্ষ নদ , ব্রহ্মপুত্র নদ ।
নদীঃ ‘যেসকল নদীর নাম স্ত্রীবাচক সেগুলোর পর নদী থাকে।
যেমন: পদ্মা নদী, মেঘনা নদী ইত্যাদি