মৌসুমি জ্বর চিকুন গুনিয়া সম্পর্কে বিস্তারিতও জানতে চাই। এই রোগে কি মানুষ মরে ?
মৌসুমি জ্বর চিকুন গুনিয়া সম্পর্কে বিস্তারিতও জানতে চাই।
এই রোগে কি মানুষ মরে ?
চিকুন গুনিয়া একটি আফ্রিকান শব্দ যার অর্থ ধনুর মতো বাঁকা হয়ে যাওয়া। বর্তমানে বাংলাদেশে চিকুন গুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। ১৯৫৫ সালে মেরিয়ন রবিনসন নামে একজন চিকিৎসক এ রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন। ১৯৫২ সালে আফ্রিকার মেকন্দ, মোজাম্বিক ও তানজেনিয়া এলাকায় এ রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। চিকুন গুনিয়া একটি মেকন্দ শব্দ আফ্রিকায় এ রোগ আবিষ্কৃত হওয়ার পর দেখা গেল যে এ রোগের আবির্ভাব শুধু আফ্রিকায় নয় দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেক এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হয়। বর্তমানে ইউরোপ বিশেষ করে ইতালিতে এ রোগের বিস্তৃত পরিলক্ষিত হচ্ছে।
চিকুন গুনিয়া এক ধরনের ভাইরাস সংক্রামিত রোগ। এডিস মশা কামড়ের মাধ্যমে মানবদেহে এ রোগ ছড়িয়ে থাকে। চিকুন গুনিয়া অসুখের জন্য যে ভাইরাস দায়ী তা এক ধরনের ভাইরাস যা টোগা ভাইরাস পরিবারের আলফা ভাইরাস সদস্য। ইহা মানবদেহ থেকে মশা এবং মশা থেকে মানবদেহে ছড়িয়ে থাকে। ওই ভাইরাস রক্তের লোহিত কনিকা যেমন ফাইব্রোবস্নাস্ট মেকরোফেজ নামক রক্তকনিকাকে আক্রান্ত করে থাকে। আক্রান্ত হওয়ার ফলে এসব কোষ মৃত্যুবরণ করে থাকে। রক্তের ইন্টারফেরন নামক এক ধরনের অ্যান্টিভাইরাস জাতীয় পদার্থ এ রোগের আক্রমণকে রহিত করতে পারে। ভাইরাস ইনফেকশনের ফলে রক্তে ইন্টারফেকশন নামক পদার্থ তৈরি হয়।
উপসর্গ :
প্রাথমিক অবস্থায় রোগী জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে, এটা মধ্যম মাত্রার জ্বর যা দুই থেকে পাঁচদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। জ্বরের পরে রোগী শরীরের বিভিন্ন গিঁটে ব্যথায় আক্রান্ত হয় এবং সারা শরীরে রেশ (লাল দাগ ও ফোলা) দেখা দেয় এর সঙ্গে বমিভাব শরীর ব্যথা ও প্রচ- দুর্বলতা অনুভূত হয়। গিঁটের ব্যথা সাধারণত হাত এবং পায়ের গিঁটকে আক্রান্ত করে থাকে। এ ধরনের গিঁটের ব্যথা সাধারণত কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে এ ব্যথা কয়েক বছর ধরে থাকতে পারে। সাধারণভাবে মশার কামরে দুই থেকে পাঁচদিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে।
রোগ শনাক্তকরণ :
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাস শনাক্তকরণ এবং রক্তের অন্যান্য কিছু পরিবর্তন শনাক্তকরণের মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা যেতে পারে। যেমন ঈইঈ, চঈজ, খমএ, খমগ এবং ঊখওঝঅ পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করা হয়ে থাকে।
চিকিৎসা :
১. জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ বেশ কার্যকর।
২. গিঁটে ব্যথার জন্য সচরাচর ব্যবহৃত ব্যথা নিরাময়ের ওষুধ কার্যকর নয়। ব্যথা নিরাময়ের জন্য ক্লোরোকুইন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে সুফল পাওয়া যেতে পারে।
৩. জ্বরের সময় রোগীকে প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার দেয়া যেতে পারে।
৪. অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধের ভূমিকা খুবই নগণ্য।
তবে জটিলতা প্রতিরোধের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রতিরোধ :
যেহেতু চিকুন গুনিয়া মশাবাহিত রোগ তাই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে মশারি ব্যবহার, মশা নিরোধক স্প্রে, কয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। এ রোগ প্রতিরোধের জন্য ইন্টারফেরনযুক্ত সিরাম ব্যবহার করে সুফল পাওয়া যায়। উন্নত বিশ্বে চিকুন গুনিয়া প্রতিরোধের জন্য বানরের সিরাম ব্যবহার করা হয়। ডিএনএ ভ্যাকসিন আবিষ্কার এখনো পরীক্ষাগার পর্যায়ে আছে। আশা করা যাচ্ছে অতিসত্বর চিকিৎসা কাজে ব্যবহারের জন্য এ ধরনের ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।
পরিণাম :
বয়সের সঙ্গে এ রোগের পরিমাণ নির্ভরশীল। সাধারণভাবে অল্প বয়স্ক রোগীরা ১-২ সপ্তাহের মধ্যে সুস্থতা লাভ করে কিন্তু মধ্যম বয়সের রোগীরা সুস্থ হওয়ার জন্য ১-৩ মাস লেগে যেতে পারে। তবে বয়স্ক ব্যক্তিরা অনেক দীর্ঘ সময় ধরে এ রোগে ভুগতে পারেন। গর্ভবতী মহিলাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে গর্ভের বাচ্চার কোনো ধরনের অসুবিধা পরিলক্ষিত হয় না। কোনো কোনো রোগীদের পা ফুলে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। যার কারণ নির্ণয় করা এখনো সম্ভব হয়নি।
সহকারী অধ্যাপক (কার্ডিওলজি)
ডা. এম শমশের আলী
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কলেজ গেট, শ্যামলী, ঢাকা
Source: http://www.jaijaidinbd.com
বর্তমান মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বরের মতোই ভাইরাসজনিত একটি অসুখ দেখা যাচ্ছে। এতে দেহের তাপমাত্রা হঠাৎ অনেক বেড়ে ১০৪ ডিগ্রি বা আরও বেশি উঠে। এ জ্বরের নাম চিকুন গুনিয়া।
জ্বরের বৈশিষ্ট্য
* কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে না বা ঘাম দিয়ে জ্বর সারে না।
* জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা, চোখ জ্বলা, গায়ে লাল দানার মতো র্যাস, অবসাদ, অনিন্দ্রা, বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
* শরীরের বিভিন্ন স্থানে যেমন মাংসপেশিতে বা অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা ও ফুলে যেতে পারে। এ জন্য হাঁটা-চলায় দুর্বলতা বোধ হয়।
* সাধারণত ২-৫ দিন জ্বর থাকে।
* ডেঙ্গুর মতো চিকুন গুনিয়া জ্বরে মৃত্যুঝুঁকি থাকে না, কারণ এতে প্লাটিলেট কমে যায় না এবং রক্তক্ষরণের ঝুঁকিও থাকে না।
করণীয়
* মশা যাতে কামড় দিতে বা শরীরে বসতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
* এডিস মশার কামড়ে এ জ্বর হয়। এর কোনে প্রতিষেধক বা টিকা নেই।
* এ মশা দিনেরবেলায় বেশি কামড়ায়।
চিকিৎসা
* জ্বর ভালো না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
* প্রচুর পানি, ফলের জুস ও অন্যান্য তরল যথেষ্ট পরিমাণ খেতে হবে। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামলই যথেষ্ট।
ডা. রাজাশিস চক্রবর্তী
মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
Source: jugantor