জাল হাদিস কাকে বলে? হাদিস জাল করে কারা? এদের লাভ কি?
আমার ৩ টি প্রশ্ন –
- জাল হাদিস কাকে বলে?
- হাদিস জাল করে কারা?
- এদের লাভ কি?
বিস্তারিত জানতে চাই।
জাল হাদিসঃ
আরবীতে একে “মওজু” বলা হয়। এই মওজু বা জাল হাদিস হলো মিথ্যা বা বানোয়াট হাদিস যা অদৌ মূলত কোন হাদিসই নয়। ঐ সকল হাদিসকে জাল হাদিস বলা হয় যা রাসূল (সাঃ) এর নামে বানানো হয়েছে যা অদৌ কখনই তিনি বলেন নি। এক কথায় রাসূল (সাঃ) এর নাম ভাঙ্গিয়ে প্রচলিত ও কথিত হাদিসকে জাল বা মওজু বা বানোয়াট বা মিথ্যা হাদিস বলা হয়।
জাল হাদিস কোন হাদিসই নয়। জাল হাদিস বর্ণনা বা প্রচার করার মানে বা অর্থ হলো রাসূল (সাঃ) এর উপর মিথ্যারপ করা। তাকে মিথ্যার অপবাদে দূস্টো করা এবং তার কথাকে প্রত্যাখ্যান করে সীমালঙ্ঘন করা। যা জাহান্নামে যাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ। এ প্রসঙ্গে
#রাসূল (সাঃ) বলেনঃ
( مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّداً فاَلْيَتَبَوَّء ْ مَقْعَدَهُ مِنْ الناَّرِ )
“যে ব্যক্তি আমার উপরে মিথ্যারোপ করে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।”
(সহীহ বুখারী, প্রথম খন্ড, কিতাবুল ইলম, হাদিস নং ১০৭;
সহীহ মুসলিম, প্রথম খন্ড, কিতাবুল ঈমান)
#তিনি আরও বলেনঃ
“তোমরা আমার উপর মিথ্যারোক কর না, নিশ্চই আমার উপর মিথ্যারোপকারী জাহান্নামে প্রবেশ করবে”
(বুখারী, প্রথম খন্ড, কিতাবুল ইলম, হাদিস নং ১০৬;
মুসলিম, প্রথম খন্ড, কিতাবুল ঈমাণ;
ইবনু মাজাহ, হাদিস নং ২৯)
#তিনি আরও বলেনঃ
( منَ حَدَّثَ عَنِّيْ بِحَدِيْثٍ يَرَى أنَّهُ كَذِبٌ فَهُوَ أحَدُ الْكاَذِبِيْنَ )
“যে ব্যক্তি আমার নামে এমন হাদীছ বর্ণনা করে যে, তার ধারণা হয়, ওটা মিথ্যাও হতে পারে; তবে সে অন্যতম সেরা মিথ্যুক।
(সহীহ মুসলিম, প্রথম খন্ড,
কিতাবুল ঈমান)
সুতরাং হাদিস বর্ননায় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
আমাদের সমাজে অসংখ্য জাল বা বানোয়াট হাদিস প্রচলিত রয়েছে। অনেকের নিজের জ্ঞানের অজ্ঞতার কারনে অথবা দলীয় গোঁড়ামীর কারনে এসব বানানো হাদিস বিশ্বাস ও আমলের পাশাপাশি প্রচার ও প্রসার করে থাকেন। মনে রাখতে হবে আমলের জন্য যেমন সহীহ্ হাদিস জানা প্রয়োজন ঠিক তেমনি আমলকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য জাল ও যঈফ হাদিস জানা ও অন্যকে জানানো প্রয়োজন। তাই মুসলিম ভাইদেরকে সতর্ক করার লক্ষে এখানে সিরিজ ও ধারাবাহীক ক্রমিকানুসারে শুধুমাত্র জাল হাদিস গুলোকে (এই ধাপে) বর্ণনা করা হবে।
জানা আবশ্যক যে, জাল হাদিসর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও প্রচারক হচ্ছে পীর ও মাজার তথা কবরপূজারী এবং শিরক ও বিদয়াতপন্থীরা। এদের কেউ নিজেদের ধর্মকে টিকাতে, কেউবা নিজেদের পথভ্রষ্ট বুজুর্গের বিনা পূজীর পীর ব্যবসা জমজমাট করতে আবার কেউবা বিদয়াত ব্যবসা করে নিজেদের সংসার চালাতে এবং বিদয়াতের জিলাপীর আশায় এসব জাল হাদিস প্রচার ও প্রসার করে থাকে।
সবশেষে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথাঃ
হাদিস বর্ননা তথা অন্যের নিকট প্রচার বা জনানোর প্রধান শর্ত হিসেবে একটি বিষয়ের প্রতি নিশ্চিত থাকা উচিত; আর সেটি হলো যে হাদিসটি আপনি যার কাছ থেকে শুনেছেন বা পেয়েছেন তার নির্ভরযোগ্যতা বা গ্রহণযোগ্যতা বা বিশ্বস্ততা। অর্থাত্ সে পাপচারী কিনা, সূফীবাদী কিনা, বিদয়াতপন্থী কিনা এসব নিশ্চিত থাকা। এতে সে পোস্টারভর্তি টাইটেলধারীই আলেমই হোক কিংবা সাধারণ ফাসেক মানুষই হোক। জাল হাদিসর পৃষ্ঠপোষক সূফীবাদীরা তো দূরের কথা বিদয়াতপন্থী হলে কিংবা কোন আলেম সহীহ হাদিসকে দলের দোহাই দিয়ে না মানলে; তাদের মুখনিঃসৃত সকল হাদিসকে বর্জন করা উচিত। কেননা তারা সত্যের সঙ্গে মিথ্যা মিশিয়ে ফেলে।
হাদিস বলার ক্ষেত্রে নিচের দুটি হাদিসর প্রতি লক্ষ ও নিশ্চয়তা রেখে বর্ননা করা উচিত।