ব্যবসায়িক লক্ষ্যে সঠিক নিয়মে রেড লেডি হাইব্রিড জাতের পেঁপের চাষ পদ্ধতি।
গ্রামবাংলায় বাড়ির উঠোনে পেঁপে গাছ পরিচিত ছবি। কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ব্যবসায়িক লক্ষ্যে পেঁপে চাষ বিশেষ হয় না। অথচ, অতি উপকারী এই সব্জির চাহিদা সারা বছরই থাকে, ফল হিসাবে আরও বেশি উপকারী, আরও বেশি সুস্বাদু।
পুষ্টি মূল্য:
পাকা পেঁপে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ একটি ফল। কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমানে পেপেইন নামক হজমকারী দ্রব্য থাকে।
ভেষজ গুণ:
অজীর্ণ,কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, একজিমা, কিডনি ও পাকস্থলীর ক্যান্সার নিরাময়ে কাজ করে।
ব্যবহার:
পাকা পেঁপে ফল হিসেবে এবং কাঁচা পেপে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।
ব্যবসায়িক লক্ষ্যে সঠিক নিয়মে রেড লেডি হাইব্রিড জাতের পেঁপের চাষ পদ্ধতি।
মাটি ও জমি:
উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি যেখানে পানি নিকাশনের ভাল বন্দোবস্ত আছে, সেখানে পেঁপে চাষ করতে হবে। কারণ কয়েক ঘণ্টা জল দাঁড়ানো অবস্থাও পেঁপে গাছ সহ্য করতে পারে না। বেলে দোঁয়াশ বা দোঁয়াশ মাটি ভাল।
তবে ভালো পেঁপে চাষের জন্য দোঁআশ ও বেলে দোঁআশ মাটি বেশি উপযোগী।
মনে রাখবেনঃ অধিক অম্ল ও অধিক ক্ষার মাটিতে পেঁপে চাষ ভাল হয় না।
চারা তৈরি:
বীজ থেকে চারা হয়। রোগমুক্ত উন্নত গাছ থেকে পাকা ফল পেড়ে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এরপর বীজগুলোকে শুকনো ছাই মাখিয়ে জলে ধুয়ে নিয়ে শোকাতে হবে। বীজ শোধন জরুরি। পচা ঝুরঝুরে গোবর সার এবং পাতা পচা সার মিশিয়ে বীজতলা বানাতে হবে। বীজতলা ১৫-২০ সেমি উঁচু হবে। ৫ সেমি দূরত্বে ২-৩ সেমি গভীরে বীজ পুঁতে হালকা করে উপরে পাতাপচা সার বা মাটি ছিটিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজন মতো ঝারি দিয়ে জল দেবেন। বীজতলায় চারা ১০ সেমি মতো বড় হলে মূল জমিতে স্থানান্তর করতে হবে। মে থেকে জুন মাসের মধ্যে বীজ বুনে ফেলতে পারলে ভাল। অর্থাৎ বর্ষার শুরুতে। তবে জলসেচের ব্যবস্থা থাকলে অক্টোবর মাসেও পেঁপের চারা লাগানো যেতে পারে।
মনে রাখবেনঃ পলিথিন ব্যাগে চার তৈরি করলে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
চারা রোপণ:
দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতায় ৪৫ সেমি করে গর্ত খুঁড়ে তাতে সার দিতে হবে। এর জন্য ১০ কেজি গোবর সার, ১ কেজি নিম খোল, ১০ গ্রাম কার্বোফিউরান ৩ জি, ২৫০ গ্রাম সিঙ্গল সুপার ফসফেট ভাল করে মিশিয়ে ১৫-২০ দিন ঢেকে রাখতে হবে। এরপর গর্তে সারমাটি মিশিয়ে দিতে হবে। সাবধানে বীজতলা থেকে মাটি সমেত চারা তুলে লাগাবেন। শিকড়ের যেন ক্ষতি না হয়। প্রতি গর্তে তিনটি করে চারা লাগান। ৫-৬ মাসের মধ্যে যখন গাছে ফুল আসবে তখন প্রতিটি গর্তে স্ত্রী বা উভলিঙ্গের গাছ রেখে বাকিগুলো তুলে দিতে হবে। তবে, প্রতি ১০টি গাছের জন্য একটি পুরুষ গাছ না রাখলে আবার পরাগসংযোগ ভাল ভাবে হবে না। এতে ফলনও কমে যাবে।
সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গাছে ১৫ কেজি জৈব সার, ৫৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ৫৫০ গ্রাম টিএসপি সার, ৫৫০ গ্রাম এমওপি সার, ২৫০ গ্রাম জিপসাম সার, ২৫ গ্রাম বোরাক্স সার এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট সার একত্রে ভালভাবে প্রয়োগ করতে হয়। ইউরিয়া ও এমওপি সার ছাড়া সব সার গর্ত তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর পর গাচে নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস পর পর প্রয়োগ করতে হয়। গাছে ফুল আসলে এ মাত্রা দ্বিগুণ করা হয়।
সার প্রয়োগ:
ফল আসার লক্ষণ দেখা দিলেই গাছের চারপাশে জৈব ও রাসায়নিক সারের মিশ্রণ প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম, ফসফেট ২৫০ গ্রাম, পটাশ ৭৫ গ্রাম ২০ কেজি গোবর সারের সঙ্গে মিশিয়ে গাছের চারপাশে দিতে হবে। অণুখাদ্যের প্রয়োজন হলে স্প্রে করতে হবে পাতায়।
পরিচর্যা:
নিয়মিত জল দিতে হবে গাছে। আবার জল যাতে না দাঁড়ায়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। আগাছা যেন না হয়। গোড়ার মাটি হালকা করে খুঁড়ে ঝুরঝুরে করে দিতে হবে। স্ত্রী ফুল বাড়াতে পেঁপে গাছের ৪-৫ মাস বয়সে ইথারেল ১ মিলি প্রতি ৪ লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। এনএএ ৪০ এমজি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে স্ত্রী ফুল বাড়ে।
অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা:
ফুল হতে ফল ধরা নিশ্চিত মনে হলে একটি বোঁটায় একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিড়ে ফেলতে হবে। গাছ যাতে ঝড়ে না ভেঙ্গে যায় তার জন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হয়।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা:
চারা রোপণ এবং সার প্রয়োগের পর প্রয়োজনমতো পানি দিতে হবে। খরা মৌসুমে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে।
রোগ ব্যবস্থাপনা:
রোগের নাম:
পেঁপের ড্যাম্পিং অফ রোগ দমন।
ভূমিকা: মাটিতে যে ছত্রাক থাকে তার দ্বারা এ রোগ হতে পারে। এ রোগটি সাধারণত: চারা অবস্থায় অথবা বীজ গজানোর সময় হয়ে থাকে। বীজের অংকুর গজানোর সময় এ রোগের জীবাণু অতি সহজেই বীজ অথবা অংকুরকে আক্রমণ করে।
ক্ষতির নমুনা: এ অবস্থায় বীজ পচে যায় এবং চারা মাটির উপর বের হয়ে আসতে পারেনা। এভাবে অংকুর গজানোর আগেই পচন হতে পারে। চারা গজানোর পরেও জীবাণুর আক্রমণ ঘটে। এ পর্যায়ে চারার গোড়া বা শিকড় পচে গিয়ে আক্রান্ত চারা মাটিতে পড়ে যায় এবং মারা যায়। চারার বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ রোগের প্রকোপ কমে যায়।
অনুকূল পরিবেশ: বর্সা মৌসুমে ঢলে পড়া রোগের প্রকোপ খুব বেশি।
বিস্তার: বৃষ্টির পানিতে অথবা সেচের পানিতে এ রোগের জীবাণু ছড়ায়।
ব্যবস্থাপনা: গাছের গোড়ার পানি নিকাশের ভাল ব্যবস্থা রাখা দরকার। রোগাক্রান্ত চারা গাছ মাটি থেকে উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। আক্রমন বেশি হলে রিডোমিল এমজেড-৭২ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর গাছের গোড়ার চারিদিকের মাটিতে প্রয়োগ করা দরকার। জিংকের ঘাটতির জন্য মোজাইক লক্ষণ দেখা দিলে গাছের গোড়ায় গাছপ্রতি ৫-১০ গ্রাম জিংক প্রয়োগ করলে এবং ০.২% জিংক গাছের পাতায় স্প্রে করলে এ সমস্যা কমে যায়।
ফসল তোলা: সবজি হিসেবে কচি ফল সংগ্রহ করা হয়। পাকানোর জন্য ফলের ত্বক হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে সংগ্রহ করতে হয়।
আপনাদের কিছু জানার থাকলে নিচে লিখুন। আমি উত্তর দেব ইনশাল্লাহ।