স্পেশাল এডুকেশন কি? বাংলাদেশে কি স্পেশাল এডুকেশন নামের কোন ডিগ্রি চালু আছে?
স্পেশাল এডুকেশন কি?
বাংলাদেশে কি স্পেশাল এডুকেশন নামের কোন ডিগ্রি চালু আছে?
জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্র
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রয়েছে অন্য সবার মতই শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের সমান অধিকার। তাদের এ অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক মানসিক, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকাস্থ মিরপুরে ৬ একর জমির উপর ‘জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্র’ স্থাপন করা হয়। সমাজেকল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্র এর কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়। জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্রে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর মোট পদ ৭৫টি। ১৯৯২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এ কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়।
স্পেশাল এডুকেশন এর মূল উদ্দেশ্য
এদেশের দরিদ্র ও অবহেলিত জনগোষ্ঠির এক বিরাট অংশ হচ্ছে প্রতিবন্ধী । এদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল সৃষ্টি, বিশেষ শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও বিতরণসহ সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন ও উদ্ধুদ্ধকরণে সহায়তা প্রদান করাই এ কেন্দ্রের মূল উদ্দেশ্য।
ভিশন
দেশের মানসিক, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দক্ষ জনবল তৈরি, বিশেষ শিক্ষা উপকরণ প্রস্ত্তত/ক্রয় ও বিতরণসহ জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সহায়তা প্রদান।
মিশন
১. দৃষ্টি, শ্রবণ ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুকে বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান।
২. ‘বিশেষ শিক্ষা’ প্রদানে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ‘ব্যাচেলর ইন স্পেশাল এডুকেশন’ (বিএসএড) ডিগ্রি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ।
৩. ‘প্রতিবন্ধীতা নিরূপণ ও প্রতিরোধ এবং বিশেষ শিক্ষা’ বিষয়ে কর্মশালার আয়োজনের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ।
৪. প্রতিবৎসর জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস, আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শিশু দিবস, সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস, অটিজম সচেতনতা দিবসসহ অন্যান্য দিবসগুলো যথাযথ গুরুত্ব সহকারে পালন।
কার্যক্রমের বিবরণ
কেন্দ্রের অভ্যন্তরে মোট ১৩টি ভবনের মধ্যে ৩ তলা বিশিষ্ট প্রধান ভবনটিতে কেন্দ্রের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তাছাড়া এ ভবনে রয়েছে বিশেষ শিক্ষা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, বি,এস,এড হোস্টেল ও রিসোর্স সেকশন। মানসিক ,শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্র ছাত্রীদের জন্যে ৩টি পৃথক স্কুলসহ ছেলে ও মেয়েদের জন্যে রয়েছে ৬টি হোস্টেল।
ক) বিশেষ শিক্ষা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ
প্রতিবন্ধীদের জন্যে বিশেষ শিক্ষায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক তৈরির লক্ষ্যেই এ কলেজের সূচনা। কলেজের শুরুতে স্বল্পমেয়াদি কোর্স পরিচালনা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষ হতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত এ কলেজে ১ বছর মেয়াদি বিএড সমমানের বিএসএড (ব্যাচেলর ইন স্পেশাল এডুকেশন) কোর্স পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করা হয়। কলেজের আসন সংখ্যা মোট ৪৫ এবং এর মধ্যে ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থীর জন্যে আবাসিক সুবিধা বিদ্যমান।
সেবার নাম: বিশেষ শিক্ষা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ ১টি (ছাত্রাবাসসহ)
সেবার বিবরণ: বি এস এড কোর্স ( বি এড সমমান)- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত, ১বছর মেয়াদি। আসন সংখ্যা -৪৫জন (আবাসিক -৩০)
সেবা গ্রহীতা: দেশের যে কোন অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক ডিগ্রিধারী যাদের বয়স অনুর্ধ ৩৫ বৎসর।
সেবা প্রাপ্তির সময়সীমা: ভর্তি প্রক্রিয়া মে-জুন। প্রতি বৎসর জুলাই থেকে ক্লাস শুরু হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিকুলাম অনুযায়ী সমাপ্ত হয়।
খ) রিসোর্স সেকশন
প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা কার্যক্রমকে সহজ, সাবলীল ও কার্যকরী করার লক্ষ্যে রিসোর্স সেকশনের ৩টি শাখা যথাক্রমে , টিচিং এইড, হিয়ারিং এইড এবং লাইব্রেরি। লাইব্রেরির এ শাখায় প্রতিবন্ধিতা ও অন্যান্য সাধারণ বিষয়ের প্রায়ই ৫ হাজার বই ও সাময়িকী রয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের প্রভাষক, অতিথি বক্ততা ও প্রশিক্ষণার্থীসহ কেন্দ্রের সকল শ্রেণীর পাঠকের পাঠ সেবা প্রদান করে যাচ্ছে । টিচিং এইড শাখায় মানসিক , শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্র ছাত্রীদের জন্যে বিশেষ শিক্ষা উপকরণ তৈরি, ক্রয় ও বিতরণসহ বিভিন্ন উপরকরণের প্রাথমিক মেরামতের ব্যবস্থা রয়েছে।
হিয়ারিং এইড শাখায় শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের নিয়মিত শ্রবণ ক্ষমতার মাত্রা নিরুপণ, ইয়ারমোল্ড তৈরি ও মেরামতের ব্যবস্থা রয়েছে । উপরোক্ত কার্যক্রম ছাড়াও এ দুটি শাখার কর্মকর্তাগণ কলেজের ব্যবহারিক ক্লাসে সহযোগিতা প্রদান ও বি,এস,এড কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের প্রয়োজনে শিক্ষা সহায়ক উপকরণ সরবরাহ করে থাকেন।
সেবার নাম: রিসোর্স সেকশন।
সেবার বিবরণ: ক) হিয়ারিং এইড শাখার মাধ্যমে শ্রবণ ক্ষমতার মাত্রা নিরূপণ, ইয়ার মোন্ড তৈরি ও মেরামত। খ) টিচিং এইড শাখায় শিক্ষা উপকরণ তৈরি/ক্রয় ও বিতরণ। গ) লাইব্রেরি শাখা- কলেজ ও স্কুলের শিক্ষক, বি এস এড কোর্সের ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠসেবা।
সেবা গ্রহীতা: শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীগণ ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা।
সেবা প্রাপ্তির সময়সীমা: বৎসরব্যাপি।
গ) প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় সমূহের কার্যক্রম
মানসিক, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্যে ৩টি বিদ্যালয়ে আবাসিক সুবিধাসহ ৭ বছর মেয়াদি বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। এ বিদ্যালয়গুলো বিশেষ শিক্ষা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের বিএসএড কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের পাঠদান অনুশীলনের জন্যে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের গবেষণার (থিসিস) কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
মানসিক প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা ৫০। এর মধ্যে ২০ জন ছেলে ও ১০ জন মেয়ের জন্যে আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। বাকী ২০জন অনাবাসিক । এ বিদ্যালয়ে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্যে উপযোগী বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এদের কারিকুলাম প্রাথমিক শিক্ষার প্রচলিত কারিকুলাম হতে কিছুটা সহজ ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। শারীরিক সমস্যাগ্রস্ত বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্যে নিয়মিত ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে।
শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা ৭০। এর মধ্যে ৩০ জন ছেলে ও ২০ জন মেয়ের জন্যে আবাসিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। বাকী ২০জন অনাবাসিক । এ বিদ্যালয়ে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের সাথে যোগাযোগের জন্যে বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেমন ইশারা ভাষা, সার্বিক যোগাযোগ পদ্ধতি । তাছাড়া এদের কথা বলার প্রশিক্ষণ ও হিয়ারিং এইড ব্যবহারের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। বিদ্যালয়ের পাঠদানে ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষার প্রচলিত কারিকুলাম অনুসরণে ৫ম শ্রেণী পযর্ন্ত লেখাপড়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা ৭০। তন্মধ্যে ৩০ জন ছেলে ও ২০ জন মেয়ের জন্যে আবাসিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। বাকী ২০জন অনাবাসিক। এখানে ১ম-৫ম শ্রেণী পযর্ন্ত প্রাথমিক শিক্ষার প্রচলিত কারিকুলাম অনুসরণ করে ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষা দানের ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া গণিত শেখার জন্যে এবাকাস ও নিরাপদ চলাচলের জন্যে ওরিয়েন্টেশন ও মবিলিটি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে।
সেবার নাম: বিশেষ স্কুল ও ছাত্রাবাস-০৩ টি (প্রাথমিক শিক্ষা পর্যন্ত)।
সেবার বিবরণ: মানসিক প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, আসন ৫০ আবাসিক ৩০, অনাবাসিক ২০। শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়- আসন ৭০ আবাসিক ৫০, অনাবাসিক ২০।দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়-বিদ্যালয়- আসন ৭০ আবাসিক ৫০, অনাবাসিক ২০।
সেবা গ্রহীতা: মানসিক, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশু। যাদের বয়স-৬ হতে ১১ এর মধ্যে।
সেবা প্রাপ্তির সময়সীমা: প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে ভর্তি ফরম বিতরণ ও গ্রহণ করা হয়। ৬-১১বছরের মৃদু ও মাঝারী পর্যায়ের প্রতিবন্ধী শিশুদের আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে ভর্তি করা হয়।
ঘ) শিক্ষা সহায়ক অন্যান্য কার্যক্রম
কেন্দ্রের ৩টি বিদ্যালয়ের সকল প্রতিবন্ধী শিশুর জন্যে এ.ডি.এল ( দৈনন্দিন কার্যাবলী ) প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
মানসিক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে একজন অভিজ্ঞ সংগীত শিক্ষিকার তত্ত্বাবধানে নিয়মিত সংগীত শিক্ষা দেয়া হয়। তাছাড়া শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের অভিনয় ও নৃত্য এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের আবৃত্তি ও গল্প বলা ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শী করে তোলার ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়মিত শরীরচর্চা ও খেলাধূলার ব্যবস্থা আছে । এজন্যে একজন অভিজ্ঞ শরীরচর্চা শিক্ষক আছেন। তাছাড়া স্কাউটিং বিষয়ে কেন্দ্রস্থ ৩টি বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষিকার প্রশিক্ষণ রয়েছে, যাদের তত্ত্বাবধানে প্রতিবন্ধী শিশুদের বয়েজ স্কাউটও গালর্স গাইড প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
স্কুলে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি আর্ট, পেইন্টিং, সেলাই, কৃষিকাজ, বাঁশ ও বেত এবং কাঠের কাজ ইত্যাদি বিষয়ে প্রাক-বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা চালু আছে।
ঙ) হোস্টেল কার্যক্রম
কেন্দ্রে মোট ১৩০ জন মানসিক, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্যে পৃথক পৃথক আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। এদের ভরণ-পোষণের জন্যে হাউজ প্যারেন্ট, মেট্রন ও এটেনডেন্ট রয়েছেন।
চ) চিকিৎসা সুবিধা
কেন্দ্রের সকল প্রতিবন্ধী শিশুর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্যে একজন খন্ডকালীন ডাক্তার ও একজন সার্বক্ষণিক নার্স নিয়োজিত রয়েছেন।
চ) ভর্তি প্রক্রিয়া
৬-১১ বছরের মৃদু ও মাঝারী পর্যায়ের যে কোন ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুর স্কুলে ভর্তির জন্যে প্রতি বৎসর ডিসেম্বর মাসে ফরম বিতরণ করা হয়। তবে, এসেসমেন্ট কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত শিশুরা আসন শূন্য সাপেক্ষে সংশিষ্ট স্কুলে সম্পূর্ণ বিনা খরচে ভর্তি হতে পারে।